ফাল্গুনী তানিয়া মূলত একজন গবেষক। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি তিনি বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাঁখায় বিচরণ রয়েছে তার। এবারের অমর একুশে বইমেলায় তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার। এর মধ্যে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধের, অন্য দুটি শিশুতোষ বই।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে শুরু করে মার্ক্সবাদ, নিম্নবর্গ, নারীবাদ, নব্য ইতিহাসবাদ, হাংরি আন্দোলন তত্ত্বসহ উপন্যাস, কবিতা, শিশুতোষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখা উনিশটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিক হয়েছে গবেষণামূলক প্রবন্ধের ‘পাঠ ও পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের সাহিত্য’ বইটি। এটি প্রকাশিত হয়েছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে।

এই গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলোতে ইম্প্রেশনিজম, মার্ক্সবাদ ফেমিনিজব্দ, সাবজস্টার্ন তত্ত্ব, উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্ব, নিও-মিস্টিসিজম ইত্যাদি তত্ত্বকে বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পাশ্চাত্যের ভাত্ত্বিক ভাবনার শাশাপাশি প্রাদের হাংরি আন্দোলন এবং দেবেশ রায় কথিত প্রাচ্যের নিজস্ব গঠনরীতির অনুসন্ধান রয়েছে গ্রন্থটিতে। তবে সেগুলো তত্ত্ব ভারে ভারাক্রান্ত নয়, সহজ গদ্যে লেখা। গবেষণা ও ক্রিটিকাল থিঙ্কিংয়ের সক্ষমতার জন্য বিশেষ জরুরি বলে বিবেচনা করে প্রবন্ধকারের চিন্তার সারাৎসাত্রই এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মনোবিশ্লেষণ ও গভীর উপলব্ধির জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে এই গ্রন্থে। প্রবন্ধগুলো হয়ে উঠেছে ইতিহাস চেতনার এক অনন্য দলিল।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় জোবায়ের মিলনের গল্পগ্রন্থ ‘মাথাহীন মানুষের দেশে’

বইমেলায় গাজী মুনছুর আজিজের ভ্রমণগ্রন্থ ‘পাখির খোঁজে বাংলাজুড়ে’

এবারের মেলায় বাংলাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ফাল্গুনী তানিয়ার প্রথম শিশুতোষ বই ‘হারিয়ে গেল বানর ছানার মা’।

বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন,  ‘‘দুটো শিশুর সঙ্গে পরিণত হচ্ছি আমি। তাই ওদের চাহিদা মেটাতে শিশুদের জন্য লিখতে উৎসাহী হয়েছি। বইটি পড়লে শিশুরা বিভিন্ন প্রাণীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারবে। আপনারা যারা বইটি শিশুদের পড়াবেন, ধাঁধাঁর মত করে আগে জিজ্ঞেস করতে পারেন এই বৈশিষ্ট্যগুলো কোন প্রাণীর বলোতো।’’

অন্য শিশুতোষ বই ‘তুমিই সেরা’ প্রকাশ করেছে পরিবার পাবলিকেশন্স। বইটি সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘‘প্রতিটি শিশুই স্বতন্ত্র। শিশুবান্ধব পৃথিবী গড়ার জন্য সব শিশুর মনে তারা যে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বোধটি তৈরি করা জরুরী। শিশুরা তাদের প্রকৃত ভালোবাসার জায়গাটি চিহ্নিত করতে পারলে অবশ্যই একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। তুমিই সবার সেরা বইটি পড়লে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। জীবনের দুঃসময় মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’’

ফাল্গুনী তানিয়ার জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২, যশোর জেলার শার্শা থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম ফুলসরে। পিতা মো.

নাসির উদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাতা বেগম তাহমিনা অত্যন্ত মুক্তমনের মানুষ।

ফাল্গুনী তানিয়ার প্রথম গ্রন্থ 'হিমু এবং আমরা' হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী চরিত্র হিমুকে কেন্দ্র করে। 

ঢাকা/হাসান/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রবন ধ তত ত ব র জন য বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।

২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।

দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।

স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।

তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।

ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।

৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিং

দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।

সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়