শেরপুরে হামলার ঘটনায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু
Published: 26th, February 2025 GMT
শেরপুরে আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বিএনপি নেতা জাকারিয়া বাদলের (৪৭) মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান রুপন ও নিহতের স্বজন রমজান আলী।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে বিএনপি নেতাসহ ৩ জনকে কুপিয়ে আহত
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩
এর আগে, গতকাল বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ এলাকার মাদরাসার সামনে জাকারিয়া বাদলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহতরা হলেন- সোহাগ আলম (৩৫) ও রুহুল। তাদের মধ্যে সোহাগকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত জাকারিয়া বাদলের স্বজন ও ছাত্রদল কর্মী রমজান আলী জানান, কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সঙ্গে বাদলের দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। সম্প্রতি জেলা বিএনপির গ্রুপিং স্থানীয় ওই দুই নেতার সম্পর্ককে আরো জটিল করে তোলে। আবার হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগ নেতা নূরে আলমের সঙ্গে বাদলের রাজনৈতিক বৈরিতাও অনেক আগে থেকেই।
বাদলকে দমন করতে সম্প্রতি শেরপুর জেলা কারাগারে থাকা সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলমের সঙ্গে দেখা করেন লুৎফর। ওই দুইজন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগাম পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি নেতা লুৎফর জেলে সাক্ষাৎ পরবর্তী এলাকায় গিয়ে কৃষক লীগ নেতা নূরে আলমের লোকজনের সঙ্গে গোপন মিটিং করেন।
তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার বিকেলে জাকারিয়া বাদলসহ তিনজন একই মোটরসাইকেলে ভীমগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। আগে থেকে ওৎপেতে থাকা নূরে আলম ও লুৎফরের অনুসারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। তারা বাদলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে শেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাদল ও সোহাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠান।
তিনি জানান, শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা বাদলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। পথেই তার মৃত্যু হয়।
শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেতা জাকারিয়া বাদলের বিরোধ চলছে। এরই জেরে কৃষক লীগ নেতা নূরে আলমের লোকজন লুৎফরের লোকজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাদলের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।”
অভিযোগ অস্বীকার করে কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, “বাদল আমার দলেরই লোক। আমি কেন তার ওপর হামলা করব? বাদলের অনেক শত্রু। তাদেরই কেউ হয়তো হামলা করেছে।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো.
ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ল ৎফর র ব এনপ র র ল কজন ব দল র আলম র
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।