ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিপরীতে নারাজি আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।

অপর দিকে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন আসমা আক্তার পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করার আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আজ মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে নন, এমন কর্মকর্তাকে মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৪ মের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

২ ফেব্রুয়ারি বাদীপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেল আইনজীবী সেলিম জাবেদ আদালতকে বলেছিলেন, তোফাজ্জল হত্যা মামলায় ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁদের জবানবন্দিতে উঠে আসা আটজনের নাম অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়নি। তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

তবে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন আসমা আক্তারের আইনজীবী জিয়াউর রহমান আদালতকে বলেছিলেন, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবেই তদন্ত করে ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ভিডিও ফুটেজে যাঁদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে আসামি করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সুতরাং এ মামলা অধিকতর তদন্তের কোনো সুযোগ নেই।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। সেদিন রাত আটটার দিকে তোফাজ্জল নামের ওই যুবক হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাঁকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। মারধরের পর দিবাগত রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন আসমা আক্তার বাদী হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় শাহবাগ থানা-পুলিশ।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ ছাত্রের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁরা এ হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আর অন্যরা পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।

আরও পড়ুনতোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা: অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত কর তদন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট

সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার আগে হাজতখানার ভেতর থেকে এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।

হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে আদালতের ভেতরের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খায়রুল হককে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে আনা হয়। পরে দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হাত ধরে রাখেন। তিনি হেঁটে হেঁটে নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠেন। পরে দোতলা থেকে আবার হেঁটে হেঁটে তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তখন সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। নিজের দুই হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তখনো বিচারক আদালতকক্ষে আসেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকাতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালতকক্ষে আসেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ। এ সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ বি এম খায়রুল হকের নাম ধরে ডাকেন।

তখন রায় জালিয়াতির অভিযোগে করা শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এসআই খালেক মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই সংক্ষিপ্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মতপ্রকাশ করেন যে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য মত দেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি), সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) মত দেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ আপিল বিভাগের এই তিন বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিপক্ষে মত দেন।’

প্রিজন ভ্যানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বুধবার ঢাকার আদালত এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • বিএসবির বাশার প্রতারণার আরও ৯ মামলায় গ্রেপ্তার