ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে মতপ্রকাশের অধিকার
Published: 27th, February 2025 GMT
প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ছয়টি সংগঠন ও জোট। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অধ্যাদেশগুলো যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নাগরিকবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউসহ বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছে– অ্যাকসেস নাও, আর্টিকেল নাইন্টিন, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালীন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে দেশটিতে বড় পরিসরে পদ্ধতিগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন হচ্ছে। এর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা ও উপাত্ত সুরক্ষা আইনের সংস্কারও রয়েছে। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সংস্কারের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টাগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছে ছয় সংগঠন ও জোট। তবে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা বা অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ছাড়াই এই উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিকাঠামোয় উল্লেখ করা মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাইবার জগৎ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৃহত্তর পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে এ দুই অধ্যাদেশের খসড়া। বরং প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশগুলোয় অস্পষ্ট, বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট নয় এমন বিধানের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। এই বিধানগুলো অধ্যাদেশটির অপব্যাখ্যা, অপব্যবহার– বিশেষ করে মানবাধিকার ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির অধিকার খর্বের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার নিয়মনীতি সংস্কারে গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অধ্যাদেশগুলো প্রণয়ন এবং সেগুলো যেন অধিকারভিত্তিক ও নাগরিকবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘হাউসে কাউসার’ উম্মতের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত
হাউসে কাউসার হলো একটি পবিত্র পানির কূপ, যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে। যে ব্যক্তি এটি থেকে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।
এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কিয়ামতের দিনে বিশেষ উপহার হিসেবে উপস্থাপিত হবে। সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সুরা কাউসার, আয়াত: ১)
তাফসির অনুসারে, ‘কাউসার’ শব্দটি বহু অর্থ বহন করে, যার মধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাতের একটি নদী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত।
যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে।হাদিসে হাউসে কাউসাররাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০)
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোক আমার হাউসের কাছে আসবে, আমি তাদের চিনব এবং তারাও আমাকে চিনবে। কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি বলব, ‘তারা আমার উম্মত।’ ফেরেশতারা বলবে, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন আমি বলব, ‘যারা আমার পরে দ্বীন বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,০৫১)
সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা অজুর কারণে দীপ্তিমান হবে, এমন চিহ্ন অন্য কোনো উম্মতের হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯)
হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একটি নহরের তীরে পৌঁছালাম, যার পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘এটি হাউসে কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬; তিরমিজি, হাদিস: ২,৫৪৪)
হাউসে কাউসারের বৈশিষ্ট্যঅবস্থান: হাউসে কাউসার কিয়ামতের দিন মিজানের আগে বা পরে মুমিনদের জন্য উপস্থাপিত হবে। কিছু হাদিসে এটি জান্নাতের প্রবেশপথে অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে।
প্রশস্ততা: এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অত্যন্ত বিশাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর দৈর্ঘ্য আদন (ইয়েমেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও বেশি এবং প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৮১)।
পানির গুণাগুণ: পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে শুভ্র এবং মধু ও দুধের চেয়ে মিষ্টি। এর সুগন্ধ মিশকের (কস্তুরির) চেয়ে অধিক মনোমুগ্ধকর। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)
পাত্র: হাউসের পানি পানের জন্য পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো অসংখ্য ও উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)।
পাড়ের সৌন্দর্য: এর পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত, যা এর শোভা বৃদ্ধি করে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬)।
হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫কারা পান করতে পারবেনহাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে অজুর কারণে চিনতে পারবেন, কারণ তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিমান হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)
তবে কিছু লোক হাউসের কাছে এলেও ফেরেশতারা তাদের তাড়িয়ে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করলেও ফেরেশতারা বলবেন, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন রাসুল (সা.) বলবেন, ‘যারা আমার পরে দ্বীনকে বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়০২ জুলাই ২০২৩