দেশের অনলাইন আয়কর রিটার্নে বড় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন জমার হার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এই ই-রিটার্ন সিস্টেমটি তৈরি করে দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজারেরও বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ২৬ হাজারের মতো। নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করেছেন ১৮ লাখ ৬২ হাজারের বেশি করদাতা।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন,  এবারের ই-রিটার্ন জমা দেওয়ায় নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। এনবিআর যা ধরে রাখতে চায়।  তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআর দেশীয় সফটওয়্যারের ওপরে ভরসা রাখতে চায়। দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় অনলাইনে রিটার্ন জমা নিতে এনবিআরের ওপর চাপ তৈরি হয়। সে সময় আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সিনেসিস আইটি মাত্র চার মাসে ই-রিটার্নের প্রথম ভার্সন তৈরি করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ই-টিআইএন সিস্টেমে ১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নিবন্ধন হয়েছে যা দেশের অন্যতম বড় ডেটাবেইজ।
২০১৩ সালে ই-টিআইএনের মাধ্যমে আয়কর বিভাগ প্রথম অটোমেশন কার্যক্রম শুরু করে, যার শুরু সিনেসিস আইটির হাত ধরে। 

সিনেসিস আইটির প্রধান সলিউশন অফিসার আমিনুল বারী শুভ্র বলেন, ‘সরকার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টার সফল উদাহরণ হলো ই-রিটার্ন। কর ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরে এটি একটি বড় মাইলফলক। ই-রিটার্ন সিস্টেমের ডিজাইনে সাইবার নিরাপত্তা এবং করদাতার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’
অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এখন আন্তর্জাতিক মানের সলিউশন ডেভেলপ করছে। তাই সে ক্ষেত্রে বিদেশি সফটওয়্যার কেনার মানে নেই। তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সিনেসিস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এই ই-রিটার্ন সিস্টেম গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং একটি দেশের সঙ্গে চুক্তির আলোচনা চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আয়কর স ন স স আইট

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিমাণ ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ন্যূনতম জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শিক্ষা বিষয়ক বাজেটের আলোচনায় শিক্ষাবিদরা এসব কথা বলেন। সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) এর আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে মাহাথির মোহাম্মদ ১০ বছরে মালয়েশিয়ার চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের দেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শিক্ষা উন্নতি করে দেশটি এখন বিশ্বের উন্নত দেশের তালিকায় ওঠে এসেছে। 

এশিয়ার কয়েকটি দেশের শিক্ষায় জিডিপির বরাদ্দের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমে এসেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দ তলানির দিকে। বিগত বছরগুলোতে যেই পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেই টাকা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে দেশের চেহারা বদলে যেতো। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আকর্ষণীয়। শিক্ষায় উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। নইলে মেধা পাচার হয়ে যাবে। শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিস্তার করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিএনসিসিকে আরও কার্যকর করতে হবে।

অধ্যাপক মনিনুর রশিদ বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ থাকলে পরিবর্তন আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করতে চান। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেট কম। শিক্ষায় বাজেটে ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এদেশের শিক্ষার বরাদ্দ খুবই কম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাত্র ৩৬ হাজার টাকা বেতন পান। এই টাকায় তারা কীভাবে চলবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হলে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এই যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা, তাহলে অন্যান্য জায়গার কেমন সেটা বোঝাই যায়। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের বেতনই শুরু হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অধ্যাপকরা ৮ লাখ টাকাও বেতন পান। যার ফলে ব্র্যাক, নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষায় সঠিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষা কমিশন করার দাবি জানান।

সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা মনে শিক্ষার কাজ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনাগরিক তৈরি করা। তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কী করতে হবে- তা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। 

ধারণাপত্র সাব্বির হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে কম ছিল। এশিয়ার কয়েকটি দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাংলাদেশের বরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। 

আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন পান, অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবীও একই বেতন পান। কিন্তু শিক্ষকরা সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো সুযোগ সুবিধা পান না। শিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব সুযোগ সুবিধা দরকার তা শিক্ষকরা পান না। তারা গবেষণায় বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সম্মান দিন দিন কমছে। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা অপমান হেনস্তার শিকার হন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যেও মানসম্মত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

মাহফুজুর রহমান মানিক বলেন, গত অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিলো জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। টাকার অংকে ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে দেখানো হতো শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষায় ন্যূনতম বাজেটটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে সেটা পরিকল্পনা করে বাড়াতে হবে। যাতে বরাদ্দকৃত বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সরকারের উচিত এই বাজেটটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা বাজেট করা। তাহলে পরবর্তী সরকারগুলোর কাছে এটা উদাহরণ হতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বিবেচনায় যেমন দরকার, তেমন বরাদ্দ দেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। অথচ এদেশে প্রতি বছর প্রতিযোগিতা করে বরাদ্দ কমছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যেসব জায়গায় বরাদ্দ করা করা হয়, তা খরচের জায়গায়ও স্বচ্ছ হতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের অর্থ কম থাকলে কম বরাদ্দ হবে। সমস্যা নেই। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। যেখানে যতটা বরাদ্দ প্রয়োজন, সেখানে ততটা বরাদ্দ দিতে হবে। এ সময় তিনি মানবিক গুণাবলির উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ওমর ফারুক, শিক্ষক ও গবেষক আব্দুল্লাহ যোবায়ের, দৈনিক সমকালের জেষ্ঠ্য সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক প্রমুখ। 'বাজেটে শিক্ষা খাত: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রত্যাশা' শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সাব্বির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • দ্বিপাক্ষিক কাজ করবে বেসিস-কোরিয়া
  • বৈদেশিক ব্যবসায় কাজ করবে বেসিস-কোরিয়া
  • বৈদেশিক ব্যবসায় বেসিস-কোরিয়া ডেস্ক
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ডেস্ক চালু করল বেসিস
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ