ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকটের কারণে গ্রাহকদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বোতলজাত তেল কিনতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে ক্রেতাদের। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকেরা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার আনন্দবাজার, জগতবাজার, ফারুকী বাজার ও কাউতলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। যেসব দোকানে সয়াবিন তেল আছে, সেসব দোকান থেকে গ্রাহকদের অন্যান্য মালামাল কিনতে বাধ্য করছেন দোকানিরা।

ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্রেশ কোম্পানির বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ১৭৫ টাকা ও তিন লিটার ৫২৫ টাকা, ক্যানুলা তীরের দুই লিটার তেলের দাম ৩৮৫ টাকা ও ৫ লিটারের দাম ৮৫২ টাকা। রূপচাঁদা পাঁচ লিটার বোতলের পাইকারি দাম ৮৪২ টাকা ও খুচরা দাম ৮৫২ টাকা এবং পুষ্টির পাঁচ লিটারের পাইকারি দাম ৮৪২ ও খুচরা দাম ৮৪৫ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, তীর ক্যানুলার পাঁচ লিটার বোতলের সঙ্গে ময়দা এবং রূপচাঁদার ৫ লিটার তেলের সঙ্গে রূপচাঁদা চাল দিচ্ছেন ডিলাররা। এক কার্টনে পাঁচ লিটারের চারটি বোতল থাকে। তীর তেলের এক কার্টনের সঙ্গে ২৪ কেজি ওজনের এক বস্তা ময়দা ধরিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তেলের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে আটা, ময়দা ও চাল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা গ্রাহকদের কাছ থেকে তেলের সঙ্গে অন্যান্য মালামাল বিক্রি করছেন।

কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে তেলের দাম বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ৮৫২ টাকা মূল্যের পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল ৯৭০ থেকে ১ হাজার টাকা নিচ্ছে।

জগতবাজারের সোহেল বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী সোহেল মিয়া বলেন, প্রতিদিন গড়ে তাঁর দোকানে পাঁচ লিটারের ১০টি বোতল খুচরা বিক্রি হয়। কিন্তু গত এক মাসে ১০ কার্টনও তেল পাননি। এক কার্টনে পাঁচ লিটারের মাত্র চারটি বোতল থাকে।

মধ্যপাড়ার বাসিন্দা সাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে হলে ৫০০ টাকার বাজার করতে হচ্ছে। দুই ও তিন লিটারের তেল নিতে ন্যূনতম ১৫০ টাকা সদায় কিনতে হচ্ছে। একজন ক্রেতার কাছে একটি বোতলের বেশি বিক্রি করা হচ্ছে না। রমজান মাসে তেল বেশি লাগে। ৫০০ টাকার বাজার করে ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন। সংকট দূর না হলে তাঁর মতো ক্রেতাদের রোজায় আরও বিপাকে পড়তে হবে।

মেসার্স আরিফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও তীর কোম্পানির ডিলার আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তেলের তীব্র সংকট। দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে সয়াবিন তেল নেই। কোম্পানি থেকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না। কোম্পানি থেকে তেলের সঙ্গে তাঁদের আটা ও ময়দা ধরিয়ে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে আটা-ময়দা বিক্রি করেন বলে তেলের সঙ্গে আটা-ময়দা নেন। এরপরও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘কোম্পানি তেল সরবরাহ না করলে আমরা দোকানিরা কীভাবে ও কোথা থেকে দেব?’

রূপচাঁদা কোম্পানির ডিলার জুয়েল খান বলেন, বসুন্ধরার সয়াবিন তেল জেলায় আসছে। রূপচাঁদার তেল ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে। তবে তিন দিন আগে রূপচাঁদা তেলের গাড়ি এসেছিল। ৩০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ও ১০ লাখ টাকার চাল দিয়েছে। তাঁদের বিক্রয় প্রতিনিধিরা এসব চাল বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পরিচালক ফতেখারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। তবে এটি স্থানীয় সমস্যা না। কোম্পানিগুলো তেলের সঙ্গে বিভিন্ন জিনিস ডিলারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। তিনি বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। আশা করছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো.

ইশতিয়াক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন হলে খুবই ভয়াবহ অবস্থা। বিষয়টি আমরা খোঁজ নিব। আগামীকাল বাজারে গিয়ে বিষয়টি তদারকি করব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ব যবস য় তলজ ত ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ