খুলনা ওয়াসার বোতলজাত পানির প্লান্টে বার্ষিক আয়ের তুলনায় ব্যয় দ্বিগুণের বেশি। গত ৫ বছরে এ প্লান্ট থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ হাজার টাকা; ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত খুলনা ওয়াসার কর্মকর্তারা। বিকল্প কী করা যায়, ভাবছেন তারা।
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় নগরীর রায়েরমহল এলাকায় বোতল ওয়াটার প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এর নির্মাণকাজ শুরু; শেষ হয় ২০১৯ সালের জুনে। ব্যয় হয় ১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই প্লান্টে পানি উৎপাদন শুরু হয়। ‘সুন্দরবন পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামের প্লান্টে ৩০০ মিলিলিটার, ৫০০ মিলিলিটার, ১ লিটার, ২ লিটার, ৩ লিটার ও ৫ লিটার বোতলে পানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। প্লান্ট থেকে সরাসরি ডিলাররা পানি কিনে নিয়ে যান। গ্রাহকরা চাহিদা দিলে গাড়িতে করে তাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয় পানি। 
২০২০-২১ অর্থবছরে আয় হয় ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পরিচালনায় ব্যয় হয় ২৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয় ১৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা; ব্যয় হয় ৩৬ লাখ ২ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয় ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও ব্যয় হয় ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয় ৩৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও ব্যয় হয় ৭০ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (প্রথম ছয় মাসে) আয় হয় ১৪ লাখ ১ হাজার টাকা; ব্যয় হয় ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত ৫ বছরে উৎপাদিত বোতল পানি বিক্রি করে আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ হাজার ১৮৫ টাকা। আর উৎপাদন ও ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৪ টাকা। লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ১৪ হাজার ৪০৯ টাকা। 
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, যেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করছে, সেখানে এ প্রতিষ্ঠানের লোকসানের কারণ কী? ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণেই মূলত লোকসান হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। 
খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের সভাপতি শেখ মো.

নাসির উদ্দিন বলেন, অব্যবস্থাপনা, মনিটরিংয়ের অভাব ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিচ্ছে। লোকসান বন্ধে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 
জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হুসাইন শওকত বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি আমারও নজরে এসেছে। উৎপাদন ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছি। এ ছাড়া অতিরিক্ত জনবল আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিমাণ ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ন্যূনতম জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শিক্ষা বিষয়ক বাজেটের আলোচনায় শিক্ষাবিদরা এসব কথা বলেন। সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) এর আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে মাহাথির মোহাম্মদ ১০ বছরে মালয়েশিয়ার চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের দেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শিক্ষা উন্নতি করে দেশটি এখন বিশ্বের উন্নত দেশের তালিকায় ওঠে এসেছে। 

এশিয়ার কয়েকটি দেশের শিক্ষায় জিডিপির বরাদ্দের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমে এসেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দ তলানির দিকে। বিগত বছরগুলোতে যেই পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেই টাকা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে দেশের চেহারা বদলে যেতো। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আকর্ষণীয়। শিক্ষায় উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। নইলে মেধা পাচার হয়ে যাবে। শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিস্তার করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিএনসিসিকে আরও কার্যকর করতে হবে।

অধ্যাপক মনিনুর রশিদ বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ থাকলে পরিবর্তন আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করতে চান। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেট কম। শিক্ষায় বাজেটে ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এদেশের শিক্ষার বরাদ্দ খুবই কম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাত্র ৩৬ হাজার টাকা বেতন পান। এই টাকায় তারা কীভাবে চলবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হলে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এই যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা, তাহলে অন্যান্য জায়গার কেমন সেটা বোঝাই যায়। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের বেতনই শুরু হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অধ্যাপকরা ৮ লাখ টাকাও বেতন পান। যার ফলে ব্র্যাক, নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষায় সঠিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষা কমিশন করার দাবি জানান।

সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা মনে শিক্ষার কাজ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনাগরিক তৈরি করা। তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কী করতে হবে- তা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। 

ধারণাপত্র সাব্বির হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে কম ছিল। এশিয়ার কয়েকটি দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাংলাদেশের বরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। 

আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন পান, অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবীও একই বেতন পান। কিন্তু শিক্ষকরা সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো সুযোগ সুবিধা পান না। শিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব সুযোগ সুবিধা দরকার তা শিক্ষকরা পান না। তারা গবেষণায় বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সম্মান দিন দিন কমছে। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা অপমান হেনস্তার শিকার হন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যেও মানসম্মত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

মাহফুজুর রহমান মানিক বলেন, গত অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিলো জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। টাকার অংকে ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে দেখানো হতো শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষায় ন্যূনতম বাজেটটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে সেটা পরিকল্পনা করে বাড়াতে হবে। যাতে বরাদ্দকৃত বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সরকারের উচিত এই বাজেটটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা বাজেট করা। তাহলে পরবর্তী সরকারগুলোর কাছে এটা উদাহরণ হতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বিবেচনায় যেমন দরকার, তেমন বরাদ্দ দেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। অথচ এদেশে প্রতি বছর প্রতিযোগিতা করে বরাদ্দ কমছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যেসব জায়গায় বরাদ্দ করা করা হয়, তা খরচের জায়গায়ও স্বচ্ছ হতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের অর্থ কম থাকলে কম বরাদ্দ হবে। সমস্যা নেই। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। যেখানে যতটা বরাদ্দ প্রয়োজন, সেখানে ততটা বরাদ্দ দিতে হবে। এ সময় তিনি মানবিক গুণাবলির উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ওমর ফারুক, শিক্ষক ও গবেষক আব্দুল্লাহ যোবায়ের, দৈনিক সমকালের জেষ্ঠ্য সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক প্রমুখ। 'বাজেটে শিক্ষা খাত: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রত্যাশা' শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সাব্বির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • বাধ্যবাধকতা থাকায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ: ইসি
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • ‎আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্তদের হলের সিট বাতিল
  • আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্ত ৪ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল