জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শাইখ হত্যা মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
Published: 11th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) থেকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়া শহীদ শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ১৮ মে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলার আসামিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্যরা রয়েছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
গত বছরের ১৮ জুলাই সাভারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন শহীদ হন। ওই সময় পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে তাঁকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়ার ভিডিও তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়ামিন রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন এমআইএসটির ওসমানী হলে। বাসা ছিল সাভারের ব্যাংক টাউন আবাসিক এলাকায়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সাভারে ব্যাংক কলোনির সামনে এপিসি থেকে গুলিবিদ্ধ আশহাবুল ইয়ামিনকে টেনেহিঁচড়ে নিচে ফেলা হয়। আবার সেখান থেকে তাঁকে টেনে রাস্তার অন্য পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে তাঁকে থানায় আনা হয়। অত্যাচার করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া সাভারের আশুলিয়ায় ছয়টি লাশ পোড়ানোর ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে আলাদা আরেকটি মামলা চলছে বলেও জানান এই প্রসিকিউটর।
আরও পড়ুন‘পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে একজন জীবন্ত মানুষকে এভাবে কোনো মানুষ ফেলে দিতে পারে না’১৪ আগস্ট ২০২৪কনস্টেবল কারাগারে
গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় শাহরিয়ার খান আনাসসহ সাতজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা এক মামলায় কনস্টেবল নাসিরুলকে আজ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২২ এপ্রিল।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন বলেন, নাসিরুল জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তিনি নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করেছেন।
থানার রেকর্ডের তথ্য তুলে ধরে গাজী মনোয়ার হোসেন বলেন, সে সময় নাসিরুলের জন্য ৪০টি গুলি এবং একটি চায়নিজ রাইফেল ইস্যু করা হয়েছিল। অপারেশন শেষে মাত্র ১৬টি গুলি ফেরত দেন তিনি। বাকি গুলি তিনি ছাত্র-জনতার ওপর বর্ষণ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। তার ভিত্তিতে তাঁকে আজ পুলিশ গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনসাভারে আন্দোলনে শহীদ ইয়ামিনের লাশ উত্তোলন কার্যক্রম স্থগিত০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ