বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক এফটিএ জরুরি
Published: 12th, March 2025 GMT
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সুরক্ষা নীতি ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা জরুরি।
আজ বুধবার ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ে বিমসটেক নীতি’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর গুলশানে বিমসটেক সচিবালয়ে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের প্রাক্কালে যৌথভাবে বিশেষ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও বিমসটেক সচিবালয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডে; মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের সাতটি দেশ নিয়ে ১৯৯৭ সালে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো–অপারেশন (বিমসটেক) গঠিত হয়। সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান।
সেলিম রায়হান বলেন, বিমসটেকের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান বাধা হলো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অনুপস্থিতি। ২০০৪ সালে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ এফটিএ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, এফটিএ চূড়ান্ত করতে না পারার মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে সংবেদনশীল পণ্যের তালিকা নিয়ে মতবিরোধ, অশুল্ক বাধা, সুরক্ষামূলক বাণিজ্যনীতি ও অর্থনীতি উন্মুক্তকরণে সদস্যদেশগুলোর অনীহা। এসব কারণ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি ও প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যের পথ রুদ্ধ করছে। তাই এফটিএ আলোচনা দ্রুত এগিয়ে নিতে বিরোধ নিরসন ও অশুল্ক বাধা কমানো জরুরি।
বিমসটেক নিয়ে আরও কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, সদস্যদেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ঘাটতি, সংস্থাটির সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব (যেমন বাংলাদেশ-মিয়ানমার উত্তেজনা) এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও দক্ষ জনবলের অভাবে উদ্যোগ বাস্তবায়ন কঠিন হচ্ছে। বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণে বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
প্যানেল আলোচনায় বিমসটেকের দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাবনার কথা বলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এটি করা গেলে বাণিজ্যের ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব হবে। তবে এর জন্য দেশগুলো থেকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন হবে। না হলে এ উদ্যোগ আটকে যাবে। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বিমসটেকে পূর্ব এশিয়া থেকে আরও সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে ভাবা উচিত।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডে জানান, এই মুহূর্তে বিমসটেকের জন্য এফটিএর কোনো পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। একাধিক পক্ষ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে এফটিএতে যেতে হলে সদস্যদেশগুলোকে আগে সমঝোতায় আসতে হবে।
সংলাপে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার জানান, ১০ দেশের সংস্থা আসিয়ানের জিডিপির আকার ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার; আর তাদের বাণিজ্যের পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখ কোটি ডলার। অন্যদিকে, সাত দেশের সংস্থা বিমসটেকের জিডিপির আকার ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার; আর তাদের বাণিজ্যের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিমসটেকের দেশগুলোর মাঝে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
জায়েদী সাত্তার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সুরক্ষা নীতি ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতেও বিমসটেকের সদস্যদেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে পারে। এ জন্য সদস্য দেশগুলোর মাঝে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা, সরবরাহব্যবস্থায় পরস্পরকে সংযুক্ত রাখা এবং বিমসটেকের সদস্য বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পাচ্ছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে এফডিআইগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকেন্দ্রিক (এসডিজি) হচ্ছে। এ জন্য কৃষি, পানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রভৃতি খাতে এফডিআই আকর্ষণের চেষ্টা করা উচিত।
বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে দেশগুলোর মাঝে আঞ্চলিক সম্পর্ক বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান বিমসটেকের সাবেক মহাসচিব সুমিত নাকান্দালা। এ ক্ষেত্রে তিনি সার্ক ও আসিয়ানসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সহযোগী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন।
আঞ্চলিক দেশগুলোর মাঝে একটি সাধারণ পেমেন্ট পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করেন ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের (আরআইএস) অধ্যাপক প্রবীর দে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিকাশের পেমেন্ট পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে একটি সফল উদাহরণ। এভাবে ভারতসহ অন্যান্য দেশেও আছে। কিন্তু সবগুলো দেশের জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করছি।’
নেপালের সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিকস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক পরাস খারেল বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যে এখন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি আমরা। এ অবস্থায় আঞ্চলিক সম্পর্ক বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু পণ্য বাণিজ্যই নয়, একই সঙ্গে সেবা, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং মানুষের যোগাযোগও বাড়াতে হবে।’
প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন থাইল্যান্ডের চুলা ইউনিভার্সিটির (Chula University) আসিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক সিনিনাত সের্মচিপ, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইইআর) অধ্যাপক নিশা তানেজা ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের এদেশীয় প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ম ণ র পর ম অন ষ ঠ সদস য সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?