তিন জেলায় পৃথক ধর্ষণের ঘটনায় এক কিশোরসহ তিনজন গ্রেপ্তার
Published: 14th, March 2025 GMT
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় পৃথক ধর্ষণের ঘটনায় দুই তরুণকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার পর আজ শুক্রবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া এক শিশুকে (৭) ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে (১৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার একটি গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রংপুরের তারাগঞ্জে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতেনাতে সাগর ইসলাম (২০) নামের এক তরুণকে আটক করেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে আসে। রাতে ওই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল কাজের তাগিদে কিশোরীর বাবা বাড়ির বাইরে চলে যান। দুপুরে তাঁর মা তাঁকে বাড়িতে রেখে রান্নার খড়ি সংগ্রহ করতে পাশের একটি বাঁশ বাগানে যান। এ সুযোগে ওই কিশোরীকে বাড়িতে একা পেয়ে সাগর তাঁর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন। কিশোরীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সাগরকে হাতেনাতে আটক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ রাতে ঘটনাস্থল থেকে সাগরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। আমার মেয়েটার সর্বনাশ করে দিল। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’ কিশোরীর মা বলেন, মেয়েটাকে বাড়ির উঠান ঝাড়ু দিতে বলে তিনি রান্নার জন্য খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। একা পেয়ে সাগর মেয়েটার সর্বনাশ করেছে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, হাতেনাতে আটক করে ওই তরুণকে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় রাতে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। আজ আদালতের মাধ্যমে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সাড়ে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে জহুরুল মোল্লা (২২) নামের তরুণকে আটক করে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে ওই তরুণের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গ্রেপ্তার জহুরুল বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আসকর গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে। ভুক্তভোগী শিশুটি বর্তমানে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী বলেন, জহুরুলকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম উপজেলার একটি গ্রামের চরে কাজের জন্য অন্যদের সঙ্গে তাবু খাঁটিয়ে অবস্থান করছিলেন। বিদ্যুৎ–সংযোগ নেওয়ার অজুহাতে গতকাল বিকেলে তিনি ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে যান। তখন বাড়িতে শিশুটিকে একা পেয়ে ২০ টাকার লোভ দেখিয়ে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শিশুটির চিৎকারে তার মা পাশের বাড়ি থেকে বাড়িতে এলে জহুরুল পালানোর চেষ্টা করে। পরে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে জহুরুলকে আটক করে পুলিশে দেন। বর্তমানে শিশুটি লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া এক শিশুকে (৭) ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে (১৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলায় মামার বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত কিশোরের বাড়িতে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আছে। গত রোববার সকালে সেখানে ছোট ভাইবোনকে রেখে আসতে যায় ভুক্তভোগী শিশুটি। তখন শিশুটিকে কৌশলে নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ওই কিশোর। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মাথায় পানি ঢেলে বাড়িতে পাঠানো হয়। ওই দিন বিকেলে আবার শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন সে স্বজনদের ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক নাজমুল হক বলেন, অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর আজ দুপুরের কিছুক্ষণ পর সিরাজগঞ্জ ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। বিকেলে আদালতের নির্দেশে তাঁকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স র জগঞ জ এক ক শ র এল ক ব স ওই ক শ র উপজ ল র র একট গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ