শেখ হাসিনার সহযোগী আসামি সাবেক আইজিপি মামুন
Published: 16th, March 2025 GMT
জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সহযোগী আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। একই সঙ্গে আগামী ১৮ মার্চ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো.
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের ডান হাত ছিলেন সাবেক আইজিপি মামুন। এজন্য তাকে কৌশলগত কারণে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান আছে উল্লেখ করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে আসামির পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনিন নাহার।
পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটা মামলা আছে। সেই মামলায় তিনি একাই আসামি ছিলেন। আজ তার সঙ্গে আসামি হিসেবে সাবেক আইজিপি মামুনকে যুক্ত করে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ফলে মামুন এখন এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সহআসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেন।
মামুনকে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আইজিপি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পুলিশের সিআইডি প্রধান ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছর ৭ আগস্ট তাকে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে অবসরে পাঠানো হয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যা, গুমসহ নানা অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত মামুনের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে, সাভারের আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা সায়েদুর রহমান সুজন, মিজানুর রহমান, জাকির হোসেনকে ১৮ মে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ক আইজ প অপর ধ র ক ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)