ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরের ধাপ নিয়ে আলোচনা
Published: 16th, March 2025 GMT
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের পক্ষ থেকে মস্কোকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে নিঃশর্ত রাজি হতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে রোববার মস্কো বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
সৌদি আরবে আলোচনার পর তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এক মাসের যুদ্ধবিরিতির প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি। তিনি এর পরিবর্তে বেশ কিছু বিষয়ের তালিকা দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে এ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সোমবার ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, পুতিন যুদ্ধ বন্ধ চান না। মস্কো যেকোনো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি করতে চায়।
মস্কো জানিয়েছে, গতকাল রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে ফোন করেন। গত মাসে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা বৈঠক করে সমঝোতা বাস্তবায়নের যে সুনির্দিষ্ট দিকগুলো চিহ্নিত করেছিলেন, তা নিয়ে রুবিও ও লাভরভ আলোচনা করেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর গত ফেব্রুয়ারিতে রিয়াদে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, লাভরভ ও রুবিও যোগাযোগের পথ খুলে রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মুখপাত্র টামি ব্রুস গত শনিবার বলেন, রুবিও ও লাভরভ ইউক্রেন নিয়ে পরবর্তী ধাপের আলোচনা করেছেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন।
ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাজ্যের এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের পর রুবিও ও লাভরভের এ ফোনালাপ হয়। যুক্তরাজ্যের ওই সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, পুতিনকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা হবে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে বর্বর হামলার নিন্দা করেন। কিয়েভের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নয়টি অঞ্চলে ৯০ টি ড্রোন হামলা করেছে রাশিয়া।
পুতিন মিথ্যা বলছেনরাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল ও ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মিথ্যা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির পুতিন। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথাগুলো বলেছেন।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। এরই মধ্যে গত গ্রীষ্মে অনেকটা আকস্মিকভাবে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নেন ইউক্রেনের সেনারা। তবে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে ওই এলাকাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে।
পুতিনের দাবি—কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। তবে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কতটা জটিল হতে পারে, সে বিষয়ে মিথ্যা বলছেন পুতিন। সত্যিটা হলো, জেদ্দায় আলোচনার পর এরই মধ্যে পুতিন অযাচিতভাবে যুদ্ধটা প্রায় এক সপ্তাহ প্রলম্বিত করেছেন। তিনি এটি আরও টেনে নিয়ে যাবেন।
ইউক্রেনের পাশে যুক্তরাজ্যযুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ২৬ নেতাকে নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন করেন। সম্মেলনে তাঁরা ইউক্রেনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি হলে তা রক্ষা ও মস্কোর ওপর চাপ দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। জেলেনস্কি বলেন, আবার দেখা গেল, সন্দেহাতীতভাবে ইউক্রেন শান্তির পক্ষে। ৩০ দিনের নিঃশর্ত শান্তি প্রস্তাব মেনে নিয়েছে কিয়েভ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ইউক র ন ইউক র ন র পরর ষ ট র কর ছ ন ল ভরভ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক