শ্যামল প্রকৃতির মধ্যে একটুকরা ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। প্রায় সাড়ে চার শ বছরের পুরোনো মসজিদটির অবস্থান নড়াইল সদর উপজেলার গোয়ালবাথান গ্রামে। চুন–সুরকির গাঁথুনিতে তৈরি গোয়ালবাথান মসজিদটিতে মোগল স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক ছোঁয়া স্পষ্ট। সুনিপুণ একটি গম্বুজ, সুগঠিত ছোট চারটি মিনার আর দেয়ালের অসাধারণ কারুকাজ।

ছোটবেলা থেকে এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করা সত্তরোর্ধ্ব মো.

সুলতান কাজী বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে এই মসজিদে নামাজ পড়ি। চুন-সুরকি দিয়ে বানানো হওয়ায় মসজিদের ভেতরে গরমের সময় ঠান্ডা ও ঠান্ডার সময় গরম অনুভূত হয়। ভেতরে ঢুকলেই প্রশান্তি লাগে।’

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। মূল মসজিদের ভেতরে একসঙ্গে তিন কাতারে নামাজ আদায় করা সম্ভব। তবে সময়ের পরিক্রমায় মুসল্লির সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় মসজিদের সঙ্গে নতুন করে একটি অংশ সংযোজন করা হয়েছে, যাতে আরও বেশি মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ইবাদত করতে পারেন। মসজিদের পাশেই আছে শানবাঁধানো পুকুরঘাট, এখানে বসেই অজু সম্পন্ন করেন মুসল্লিরা।

মোগল আমলে মুন্সী হয়বৎউল্লাহ নামের একজন মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। তাঁর বংশধরেরা এখনো মসজিদটি দেখভাল করেন।

প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে নামাজ আদায় করতে এবং মসজিদটি একনজর দেখতে ভিড় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তাঁদের একজন নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকার বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম। গোয়ালবাথান গ্রামে তাঁর একটি ইটভাটা আছে। মাঝেমধ্যে এখানে আসা হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, এই মসজিদের বয়স ৪৫০ বছর। এই এলাকায় এলেই আমি ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে নামাজ পড়ি। এখানে নামাজ পড়ে খুবই শান্তি লাগে।’

মোগল আমলে মুন্সী হয়বৎউল্লাহ নামের একজন মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। তাঁর বংশধরেরা এখনো মসজিদটি দেখভাল করেন। তাঁরা বলেন, টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মসজিদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। দর্শনার্থীদের জন্য বসার বেঞ্চ বা বিশ্রামাগার নির্মাণ করা জরুরি। এ ছাড়া মসজিদের ইমামের থাকার জন্য একটি ঘর প্রয়োজন। মসজিদে আসার ১০০ ফুট কাঁচা রাস্তা বৃষ্টির সময় কাদা হয়ে যায় বলে পাকা করা দরকার।

আমি ছোটবেলা থেকে এই মসজিদে নামাজ পড়ি। চুন-সুরকি দিয়ে বানানো হওয়ায় মসজিদের ভেতরে গরমের সময় ঠান্ডা ও ঠান্ডার সময় গরম অনুভূত হয়। মো. সুলতান কাজী, মুসল্লি

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তৈয়বুর রহমান বলেন, এটি যশোর-খুলনা অঞ্চলের প্রাচীন একটি মসজিদ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি এখনো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসেনি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাদের আওতায় নিয়ে মসজিদটি দেখভাল করবে, এমনটাই আশা তাঁদের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ র ন মসজ দ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন