আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে দলটি নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার জুমা নামাজের পর থেকে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। সংগঠনটি আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীক দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি জানায়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এসে সমাবেশ করে।

একই সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ও সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। জুমার নামাজের পর তারা কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল শুরু করে রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মিছিলের সমাপ্তি টানে।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দে’র ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে মিছিল করে শিক্ষার্থীদের একটি দল।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি হবে না। আওয়ামী লীগ নামে কোনো সংস্কার হবে না। বাংলাদেশকে আমরা আরও একটি গণহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারি না। নামে-বেনামে আওয়ামী লীগ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। সেটা যেখান থেকেই হোক, এর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলে, আমরা আগস্টে যেভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনও তেমনই আছি। যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হয়, ততদিন আমরা মাঠে থাকব।

রাজু ভাস্কর্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, আড়াই তিন বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে। এরপর আওয়ামী লীগ ভারত ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করবে তিন বছরের মাথায় বিএনপিকে লাথি মেরে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে। সেই আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসে দুই হাজার শহীদের বাবা-মা, ভাইবোনদের কচুকাটা করবে। ৫০ হাজার আহতদের প্রত্যেককে ধরে ধরে কচুকাটা করবে। সুতরাং আহত শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের বাঁচাতে রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করতে দেব না। তাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।

সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে সমাবেশে শিক্ষার্থী শাহেদ ইমন বলেন, দুই হাজার শহীদ ভাইয়ের লাল রক্তে জুলাইয়ে কোটি জনতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। আমরা বলে দিচ্ছি, আমরা জান দেব, জুলাই দেব না। শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। এই বাংলার মাটিতে যতক্ষণ লীগ নামক শব্দ থাকবে; ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। যতক্ষণ পর্যন্ত শহীদদের রক্তের বিচার না হবে, হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলানো না হবে আমরা বিশ্রাম নেব না।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এবি জোবায়ের বলেন, দুই হাজার শহীদ এবং এখনো হাজার হাজার আহতরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। যে যা-ই বলুক, জুলাইয়ের সৈনিকরা এখনো মাঠে আছি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জনগণ দিয়ে দিয়েছে। হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, নয় ছাত্রসমাজ থাকবে। একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ষ দ ধ কর ভ স কর য র জন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’