সড়ক দুর্ঘটনায় বগুড়ার শেরপুর ও ভোলায় দু’জন করে নিহত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্রের প্রাণ গেছে। এ ছাড়া নাটোরের গুরুদাসপুরে সেনাসদস্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একজন ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যুবক নিহত হয়েছেন।
বগুড়ার শেরপুরের রণবীর বালা এলাকায় শুক্রবার সকালে ট্রাকচাপায় দু’জন নিহত ও অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। শেরপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামের হারুন অর রশিদ (৫২) ও হোসনাবাদ গ্রামের হানিফ উদ্দিন (৩৫)। তাদের মধ্যে হারুন পথচারী ও অপরজন শ্রমিক। ট্রাকটি যাত্রীবাহী ভটভটিকে ধাক্কা দিলে দুটি গাড়িই উল্টে যায়।
ভোলার বোরহানউদ্দিনে রায়হান মাহমুদ (২৬) ও চরফ্যাসন উপজেলায় আব্দুর রহমান নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। রায়হান শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে উদয়পুর রাস্তার মাথার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে টবগী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ইটবোঝাই ট্রলির সঙ্গে সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যদিকে চরফ্যাসনের বিআরডিবি মোড়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে আব্দুর রহমানের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে তাঁর মৃত্যু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিফাত (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তেজখালী ইউনিয়নের আকানগর পাঁচ রাস্তা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিফাত সোনারামপুর ডেঙ্গাপাড়ার সৌদিপ্রবাসী সাহেব মিয়ার ছেলে ও সোনারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
নাটোরের গুরুদাসপুরের কাছিকাটা টোলপ্লাজার ১০ নম্বর সেতু এলাকায় শুক্রবার বিকেলে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে আল মামুন (২৬) নামের এক সেনাসদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। মামুন নাটোর সদরের বড়বাড়িয়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরপি স্পেশাল বাস ঢাকায় যাচ্ছিল। পথে শাহ সিমেন্টের ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে বাসযাত্রী মামুন মারা যান।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের গুলগুলা বাজার এলাকায় শুক্রবার ভোরে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেছে মোজাহারুল ইসলাম (৪১) নামে এক ব্যক্তির। তিনি বহরপুর গ্রামের আমির বক্সের ছেলে ও কলাবাড়িয়া গ্রামের নূরে মদিনা জামে মসজিদের ইমাম। ফজরের নামাজ শেষে ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন।
সুনামগঞ্জের দিরাইয় উপজেলার সুজানগর গ্রামে শুক্রবার বিকেলে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে তফিকুর রহমান (২৭) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তফিকুরের বাড়ি উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের কান্দাহাটি গ্রামে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বিলজানি বাজারের পাশে বৃহস্পতিবার রাতে বসুন্ধরা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
পাবনার ঈশ্বরদীতে বৃহস্পতিবার বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের মধ্যে একই পরিবারের তিনজনের (মা, বাবা ও ছেলে) দাফন শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। তারা হলেন– উপজেলার বাঘইল গ্রামের রাব্বি হোসেন (৩০), তাঁর স্ত্রী মুক্তা খাতুন (২৭) ও ছেলে মুস্তাকিম (২)।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত শ ক রব র উপজ ল র দ র ঘটন স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক
রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।
গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।