তিন দশক ধরে সাহ্রিতে ডেকে যাচ্ছেন বাহার
Published: 23rd, March 2025 GMT
রাত তিনটার আগে আগে ঘরে থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। হাতে মাইক। হেঁটে হেঁটে গেয়ে শোনান বাংলা, উর্দু ও আরবির মিশেলে কাসিদা। ফাঁকে হাঁক ছেড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়ে দেন সাহ্রি খাওয়ার শেষ সময়। চট্টগ্রাম নগরের কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় সাহ্রি খাওয়ার জন্য এভাবে ঘুম ভাঙে বাসিন্দাদের।
প্রতিদিন যে মানুষটি এ কাজ করে যান, তাঁর নাম মোহাম্মদ বাহার মুন্সি। প্রায় তিন দশক ধরে প্রতি রমজানেই এটা রুটিন কাজ বাহারের। মাঝবয়সী বাহার কাজটি করেন স্ব–উদ্যোগে।
বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে বাংলাদেশে রমজান উপলক্ষে কাসিদা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রোজার রাতে পাড়ার মানুষদের ঘুম থেকে জাগাতে তরুণেরা ঢাকঢোল পিটিয়ে উর্দু ও ফারসি ভাষায় কাসিদা গাইত। সে সময় সাহ্রির সময় এই কাসিদা শুনেই মানুষের ঘুম ভাঙত।
৮ মার্চ মোহাম্মদ বাহারকে নিয়ে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গ্রামীণফোন। সেখানে মোহাম্মদ বাহারের ছবি দিয়ে তাঁর সম্পর্কে জানায় তারা। বাহারকে সেখানে উল্লেখ করা হয় ‘সাহ্রি ডাকার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাওয়া গেল বাহারকে। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘বাহার ভাই’ নামে। জানা গেল, বাহার ভাই পেশায় একজন চা–বিক্রেতা। অন্য সময় ভাসমান চা–বিক্রেতা হলেও রমজানে এলাকায় সড়কের পাশে একটি অস্থায়ী দোকানে চা বিক্রি করেন তিনি।
নগরে জিইসি এলাকার অদূরে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা। এর পাশেই বায়তুল আমান হাউজিং ও শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটি। তিন আবাসিক এলাকা মিলিয়ে কমবেশি প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস এখানে। কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার প্রায় শেষ প্রান্তে আয়েশা মসজিদের পাশে মোহাম্মদ বাহারের চায়ের দোকান।
আশপাশে তাঁর নাম বলতেই দেখিয়ে দিলেন তাঁর দোকান। সেখানেই কথা হয় মোহাম্মদ বাহারের সঙ্গে। দিনের শেষ কয়েক কাপ চা বানাতে ব্যস্ত তিনি। কথা বলতে চাইলে হাসিমুখেই রাজি হলেন বাহার। এরপর ক্রেতাদের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে এবার বাহার বলতে শুরু করলেন। জানালেন ঠিক কীভাবে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
‘আমার জন্ম এই এলাকায় ১৯৮২ সালে। এই এলাকায় আতাউর রহমান নামের একজন কাসিদা গাইতেন। তিনি টিন বাজিয়ে এ কাজ করতেন। ১৯৯৪ সালের দিকে আমি তাঁর সঙ্গে যোগ দিই নিজের ভালো লাগা থেকে। ২০০৬ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে এই দায়িত্ব তিনি আমাকে দেন। এরপর থেকে আমিই চালিয়ে যাচ্ছি।’ বলছিলেন মোহাম্মদ বাহার।
মোহাম্মদ বাহার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় তিন-চার কিলোমিটার এলাকা ঘুরি হেঁটে হেঁটে। ২টা ৫০ এ শুরু করে ৪টা ১০–এ ঘরে ঢুকি।’
মা, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে কুসুমবাগেই ভাড়া বাসায় থাকেন মোহাম্মদ বাহার। ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। বড় ছেলে বর্তমানে কাজ করে। সাহ্রিতে আগে টিন বাজিয়েই কাসিদা গাইতেন বাহার। স্থানীয় এক নারী তাঁকে একটি হ্যান্ড মাইক কিনে দেন ২০১৬ সালের দিকে। এখন সেটি ব্যবহার করেই কাসিদা গান তিনি।
কথা বলার ফাঁকে এগিয়ে এলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। মোহাম্মদ আবদুল হক নামের এক প্রবীণ জানালেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাহারকে চেনেন তিনি। তারাবিহর নামাজের পর তাঁর দোকানে গিয়ে পাড়ার মুরব্বিরা চায়ের আড্ডা জমান। তরুণেরাও থাকেন এক পাশে। এরপর আবার সেই বাহারের ডাকেই সাহ্রিতে ওঠা।
মোহাম্মদ বাহারের বয়স এখন প্রায় ৪৩ বছর। ১২ বছর বয়সে শখ থেকে শুরু করা কাসিদার কাজ করে যাচ্ছেন এখন। হিসাব করলে তিন দশক পার করেছেন। তবে একা একা এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন দুই দশক ধরে। বিদায় নেওয়ার আগে মোহাম্মদ বাহার বললেন, ‘এই কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমার ডাকে একজন ব্যক্তিও যদি উঠে রোজা রাখে, এটাই আমার শান্তি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ ব হ র র এল ক য় ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’
বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’
পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।
২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।