শান্তিগঞ্জে ধান শুকানোর জায়গা নিয়ে দু’পক্ষে সংঘর্ষ, আহত ২০
Published: 1st, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ধান শুকানোর জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন৷ আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টারি দিকে উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন- রঘুনাথপুর গ্রামের মহিবুর রহমান মানিক (৩৫), কামাল হোসেন (২৮), শাহীন (৩৮), জোনাক আহমদ (২৮), তারেক আহমদ (৩২), বদরুল আলম (৪২), শাহ আলম (৪৫), দুলাল (৪৫), মকসুদ আলী (৫০), আইবুর রহমান (৪০) ও শফিক আলী (৫০)৷ তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, রঘুনাথপুর গ্রামে পূর্ব বিরোধের জেরে ধান শুকানোর জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভেসে আসে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মৃত ব্যক্তি কোনো জেলে হতে পারেন। তবে আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহটি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, মহেশখালী থানার পুলিশ সোনাদিয়া উপকূল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে বেসরকারি উদ্ধারকারী সংস্থা সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। মরদেহটি পচে বিকৃত হয়ে গেছে। মাথার চুল উঠে গেছে। সাধারণত মৃত্যুর ২ থেকে ৪ দিন পর সাগরে ভেসে থাকলে এমন অবস্থা হয়। তবে এটি নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের মরদেহ নয়। কারণ, অরিত্রর বয়স ২২ বছর।
ইমতিয়াজ আহমদ জানান, ৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন অরিত্র। এর পর থেকে বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল ও মোহনায় তাঁর সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। কোথাও লাশ ভেসে উঠলেই যাচাই করা হচ্ছে সেটি অরিত্রর কি না।
সাত দিন আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মেঘনা মোহনায় এক ব্যক্তির লাশ ভেসে ওঠে। সেটিও অরিত্র ভেবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেটিও তাঁর লাশ ছিল না। ওই মৃত ব্যক্তির বয়স ছিল ৩২ বছর। পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। কিন্তু অরিত্রর গায়ে ছিল নীল গেঞ্জি ও থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
এখনো নিখোঁজ অরিত্র
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নামেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী—অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। তাঁদের মধ্যে প্রথমে সাদমান রহমানের লাশ উদ্ধার হয় হিমছড়ি সৈকত থেকেই। পরদিন সকালে নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ। কিন্তু ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খোঁজ নেই অরিত্রর।
সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, অরিত্রকে খুঁজতে কক্সবাজার উপকূলের ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, নুনিয়াছড়া উপকূল, বিভিন্ন মোহনা এবং সাগর চ্যানেলেও তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পর্যটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিচের কর্মীরা।
ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণিমার জোয়ারের টানে অরিত্রের মরদেহ গভীর সাগরে ভেসে গেছে। গত তিন দশকে ৭০ জনের বেশি পর্যটক সৈকতে ডুবে মারা গেলেও তাঁদের কারও লাশ তিন দিনের বেশি নিখোঁজ ছিল না। শুধু অরিত্রর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের মতে, চলতি জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে সৈকতে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, অরিত্রের লাশ হয়তো এসব গুপ্তখালের তলদেশে বালুচাপায় আটকে আছে অথবা গভীর সাগরে হারিয়ে গেছে।
তাঁরা জানান, বিমানবাহিনীর ড্রোন দিয়ে সাত দিন ধরে সাগরের গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হয়। তাতেও কোনো ফল মেলেনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জানানো হয়েছে—লাশ ভেসে উঠলে যেন সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়।
অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান ঢাকায় একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসেন। টানা ১৯ দিন ধরে বিভিন্ন সৈকত চষে বেড়িয়েছেন। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কখনো নিঃশব্দে তাকিয়ে থেকেছেন সাগরের দিকে।
সাকিব হাসান বলেন, ‘শুনেছি, সাগর যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। তবে অরিত্রর ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম হলো কেন? আমরা যেকোনো অবস্থায় ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’
অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার এখনো অপেক্ষায় আছেন—যদি কোনো এক ঢেউয়ে ভেসে আসে অরিত্র।