পরিচয় মিলল নিহত ৪ জনের, বাড়ি কুষ্টিয়া
Published: 2nd, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, দুজন শিশু ও পাঁচজন পুরুষ। এদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় মিলিছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ শুভ রঞ্জন চাকমা। তিনি বলেন, ৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের নাম সাধনা মণ্ডল, দিলীপ বিশ্বাস, আশিস মণ্ডল ও দূর্জয় মণ্ডল। তারা সবাই কুষ্টিয়া সদর থানার বেয়ালিয়া এলাকার।
শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, নিহতরা সবাই আত্মীয়স্বজন এবং ঈদের ছুটিতে কুষ্টিয়া থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রী মতিন মিয়া বলেন, চট্টগ্রামমুখী যাত্রীবাহী রিলাক্স পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। বেশ কয়েকবার চালক বাসটি থামানোর চেষ্টা করে। এর মধ্যেই বিপরীত দিক থেকে আসা কক্সবাজারমুখী মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিসের লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় ৬ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে আরও ৩ জন মারা গেছেন। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে।
লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, রাস্তার মোড় ও লবনবাহী গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবার পরিচয় জানার পর আইনি প্রক্রিয়ায় মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। মরদেহগুলো হাইওয়ে থানা হেফাজতে আছে।
একই স্থানে ঈদের দিন সোমবার দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন। এরপর দিন ১ এপ্রিল ওই স্থানেই দুই মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৮ জন আহত হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত দ র ঘটন ৪ জন র ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।