লিচু বাগানে রয়েছে সারি সারি মৌবাক্স। সামনে মরে পড়ে আছে লাখ লাখ মৌমাছি। এ চিত্র দিনাজপুরের বিরলের একটি লিচু বাগানের। মৌয়ালরা বলছেন, না বুঝে বাগান মালিক লিচুর মুকুলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এতে ৮০০টি মৌবাক্সের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মৌমাছি মরে গেছে। 

দিনাজপুরে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলাতেই লিচুর আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় বিরলে। গাছে মুকুল এলেই মধু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন মৌয়ালরা। 

বিরলের জোড়কালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাগানে গাছের নিচে সারি সারি করে বসানো হয়েছে ৮০০ মৌবাক্স। পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে চার শতাধিক ফ্রেম। সবগুলো ফ্রেমের মোম কালচে হয়ে গেছে। পাশেই পড়ে আছে লাখ লাখ মৃত মৌমাছি। 

২০ মার্চ পাবনার ভাঙ্গুরার অষ্টমনিশাহ গ্রাম থেকে পাঁচজন মৌয়াল এখানে আসেন। সঙ্গে আনেন ৮০০টি মৌবাক্স। প্রতিটি বাক্সে আটটি করে মৌ ফ্রেম থাকে। এভাবে ৮০০টি বাক্সে  ৬ হাজার ৪০০টি ফ্রেম আছে। প্রতিটি ফ্রেমে এক হাজার টাকা মূল্যের মৌমাছি থাকে।  ২০ থেকে ২২ মার্চ এসব মৌবাক্স তারা বিরলের জোড়কালী এলাকায় কয়েকটি বাগানে স্থাপন করেন। অভিযোগ রয়েছে, দুই দিন পর পার্শ্ববর্তী বাগানে লিচুর মুকুলে কীটনাশক স্প্রে করেন স্থানীয় বাগান মালিক আফজাল হোসেন। কীটনাশকের প্রভাবে ২৬ মার্চ থেকে মৌবাক্সে মৌমাছি মরতে শুরু করে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে বাগান মালিক আফজাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। 

মৌয়াল রায়হান ইসলাম জানান, ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মৌমাছি মরে গেছে। এতে ৩৮ থেকে ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক মৌমাছিই বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। বাক্সগুলো গাড়িতে করে পাবনায় নিয়ে যাওয়ার সময় ঝাঁকুনিতে আরও মৌমাছি মারা যাবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। সরকারি সহায়তা না পেলে যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা পুষিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। 

মৌয়াল মারুফ হাসান বলেন, অগ্রিম কীটনাশক দেওয়ার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ৩ ভাগের মধ্যে ২ ভাগ মাছি মারা গেছে। মধুও পাইনি। আর কয়েকদিন পর কীটনাশক প্রয়োগ করলে এ সমস্যা হতো না। 

মৌয়াল আব্দুস সালাম বলেন, কিছু বলার নেই ভাই। আমরা কারও সহযোগিতা চাই না। আল্লাহর কাছে বলেছি, তিনি এর বিচার করবেন। 

মৌয়াল আরজু বলেন, মধু পাইনি এটা সমস্যা নয়।  তিলে তিলে গড়ে তোলা খামার ধ্বংস হয়ে গেল। নতুন করে শুরু করতে হবে। এই দেড়শ বাক্সে মৌমাছি তৈরি করা কতটা কঠিন, মৌয়াল ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। 

কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, মুকুল এলে তখন কীটনাশক দেওয়ার নিয়ম নেই। যখন মুকুল থেকে একটু গুটি আসবে, তখন কীটনাশক দিতে হয়। মৌমাছি এলে তো বাগানের লাভ। মৌমাছি থাকলে লিচুর ফলন ভালো হয়। কম হলেই ফলন কমে যায়। বিষয়টি কৃষকদের বোঝাতে হবে। অনেকেই নতুন বাগানি হয়েছেন। তার নিয়ম না মেনে কীটনাশক স্প্রে করছেন। আমারও বাগান রয়েছে, আমরা নিয়ম মেনেই কীটনাশক স্প্রে করি। 

বিরল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় ২ হাজার ৫৫৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসব বাগানে প্রতি বছরই মৌয়ালরা আসেন, মধু সংগ্রহ করেন। দেশে মধুর চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন মৌ চাষিরা। এতে লিচুরও ফলন বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া মৌমাছির পরাগায়ন অন্য ফসলের উৎপাদন বাড়াতেও সহায়তা করে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে লিচু বাগানের লাখ লাখ মৌমাছি মারা গেছে। জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। এটি দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। মৌয়ালরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের সহায়তার বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। 

মৌমাছির মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এলাকার সব বাগানের মৌমাছি মারা যেত। এখানে নির্দিষ্ট স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে। তাই ধারণা করছি, লিচুর মুকুলে কীটনাশকের প্রয়োগে এ ঘটনা ঘটেছে। দু-চার দিন পর কীটনাশক প্রয়োগ করলে এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। আমরা এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ