কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের পাঁচটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন রেস্তোরাঁমালিকদের একজন নুরুল আলম চৌধুরী। এর আগে দুপুরে আটক তরুণ মো. হাশিমকে (২৫) এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাশেম কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার আবদুল হকের ছেলে। আজ দুপুরে শহরের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে হাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার দুপুরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বড় একটি মিছিল বের করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে মিছিলটি কলাতলী সৈকত সড়কে পৌঁছালে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-যুবক কয়েকটি রেস্তোরাঁয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালান। হামলাকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তার হাশেমও ছিলেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। দুপুরে আটক হাশেমকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকালে হাশেমকে আদালতে হাজির করা হবে। হামলার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ পর্যালোচনা করে হাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

পর্যটন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। হামলাকারীদের দেশের শত্রু উল্লেখ করে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া ওই মিছিলে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু সুবিধাবাদী কতিপয় ব্যক্তি মিছিল থেকে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালিয়ে কক্সবাজারকে অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি।

রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, কয়েকটি রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটকের উপস্থিতিতে সরগরম থাকা এলাকার রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী