ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়া সেই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী বলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধারণা। ফটক টপকে মাস্ক পরা এক যুবক চারুকলায় প্রবেশ করে লাইটার জ্বালিয়ে মোটিফে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন- এমন দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়। 

আগুন দেওয়ার ওই ভিডিও আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তাদের ভাষ্য, ওই যুবক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেন হলে থাকতেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওই যুবক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে আর হলে দেখা যায়নি।

আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, তারা সবাই আগুন দেওয়া যুবককে ভিডিও দেখে চিনতে পেরেছেন। কয়েকদিন আগে বিজয় ৭১ হলের সামনে এসে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়ে গেছে।
 
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়েছি। আরবি বিভাগ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তিনি সেই ব্যক্তি। বাকি কাজ পুলিশ করছে।

এদিকে মোটিফে আগুনে পোড়ানোর মামলার তদন্ত খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী। রোববার রমনা বটমূলে নববর্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সোমবার সকালে শোভাযাত্রা শুরুর আগেই জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে সম্ভব হবে।

শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদে শোভাযাত্রার জন্য বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি এবং শান্তির পায়রায় তরল দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন এক যুবক। এতে মুখাকৃতিটা একেবারে পুড়ে যায় এবং শান্তির পায়রা অর্ধেকের বেশি অংশ পুড়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজে এই দৃশ্য দেখা গেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্চিত আগুন লাগিয়েছেন ওই একজনই। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।

সিসিটিভির ফুটেজে যে যুবককে দেখা গেছে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ওই শিক্ষার্থী কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম আজ সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, তদন্তের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যুবকের পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার

বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ায় আজ শুক্রবার সকালে ভালুকের আক্রমণে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে ১০ জন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশ ম্রো জনগোষ্ঠীর। ভালুকের কারণে আহত হওয়ার ঘটনায় আবেদন না করায় এই পর্যন্ত কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ার কাইনপ্রে ম্রো (৩৫) পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জুমখেতে কাজ করতে যান। সেখানে জুমের পাশে কলাবাগানে কাজ করার সময় হঠাৎ কালো রঙের একটি ভালুক তাঁর ওপর আক্রমণ করে। ভালুকটি তাঁর পেটে ও মুখে আঘাত করতে থাকে। তাঁর চিৎকারে আশপাশে জুমের লোকজন এগিয়ে আসেন।

আহত কাইনপ্রে ম্রোর ভাই তনরুই ম্রো জানিয়েছেন, আশপাশের লোকজনের এগিয়ে আসা দেখে ভালুকটি কাইনপ্রে ম্রোকে ছেড়ে দিয়ে বনে পালিয়ে যায়। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে কাইনপ্রে ম্রোকে উদ্ধার করে দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়া জেলা শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে। পাড়াটি রুমা উপজেলার গালেংগ্যা ইউনিয়নে পড়েছে।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহত কাইনপ্রে ম্রোর পেটে ও মাথায় গভীর ক্ষত আছে। এ জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, থানচি তিন্দু ইউনিয়নে মেনপই ম্রো নামের একজন ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথম ভালুকের আক্রমণের শিকার হন। ওই একজনসহ ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ বছরে ১০ জন ভালুকের আক্রমণে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে থানচিতে দুজন, রুমাতে তিনজন, আলীকদমে একজন ও বান্দরবান সদর উপজেলা চিম্বুক পাহাড়ে চারজন রয়েছেন। কারও মৃত্যু না হলেও তাঁদের মধ্যে কেউ চোখ হারিয়েছেন, কারও হাত–পা পঙ্গু হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা একজন মারমা ও একজন খুমি ছাড়া অন্যরা সবাই ম্রো।

বন বিভাগের বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কেটে উদ্যান বাগান ও জুমচাষ করা এলাকাগুলোতে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাগানের কারণে ভালুক ও অন্যান্য বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল ও বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যসংস্থান হারাচ্ছে। জীবনের তাগিদে তারা মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। বন নির্ভর মানুষকে অন্যভাবে আয়ের সংস্থানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ না হলে বন্য প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে উঠবে না। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা না হলে বন্য প্রাণী ও মানুষ কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘হুক্কা’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জাগপা
  • চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার