Prothomalo:
2025-07-31@21:42:57 GMT

বৈশাখ উদ্‌যাপনের প্রবর্তনা

Published: 14th, April 2025 GMT

আমরা তখন খুব ছোট। ততটুকু ছোট, যতটুকু ছোট থাকলে পড়াশোনার কোনো বালাই থাকে না। সারা দিন খেলা করেই যে বয়সে সময় কেটে যায়। তখন দেখতাম, বৈশাখ এলেই বাড়িতে উৎসব লেগে যেত।

আমার চাচারা ব্যবসা করতেন। বাড়ির সঙ্গে লাগানো বড় দোকান ছিল তাঁদের। এখনকার মতো এত এত দোকান তখন ছিল না। দু-চার গ্রামের মানুষ এসে জিনিস কিনতেন আমাদের বাড়ির দোকান থেকে। সেই দোকানে নগদ কেনাবেচা চলত, বাকিও পড়ত। নতুন বছরের হিসাব শুরু করার জন্য আয়োজন করা হতো হালখাতার।

চৈত্র মাসের শেষ সন্ধ্যায় বাড়িতে ময়রা নিয়ে আসা হতো। ময়রার সঙ্গে তাঁর দু-তিনজন সহকারীও থাকতেন। তাঁরা বিশাল লোহার কড়াইয়ে মাটির চুলায় দুধ জ্বাল দিতেন। তারপর সেই দুধ থেকে তৈরি হতো ছানা। ছানার পানি ঝরানোর জন্য গামছায় পুঁটলি বেঁধে খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখা হতো। রাত ধরে চলত সাদা রসগোল্লা আর হলুদ-কমলা বুন্দিয়া বানানোর কাজ।

হালখাতা উপলক্ষে আগের দিনই রঙিন পাতলা কাগজ কেটে দোকান সাজানো হতো। তারও কয়েক দিন আগে থেকে চলত দোকান সাফসুতরো করে জিনিস সাজানোর কাজ। দোকানের সামনে অভ্যাগতদের বসার জন্য বেঞ্চ আর চেয়ার পাতা থাকত। নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন কাপড় পরে চাচারা দোকানে বসতেন। তাঁদের সামনে থাকত লাল কাপড়ে বাঁধাই করা নতুন হিসাবের খাতা। পুরোনো খাতা দেখে হিসাব করে নতুন খাতায় নাম তোলা হতো। সবাই যে সব বাকি শোধ দিতেন, তা নয়; বরং বেশির ভাগ লোককেই দেখতাম কিছু টাকা বাকি রাখতে। সেদিন দোকানে যিনিই আসতেন, তাঁকেই বাটিতে মিষ্টি খেতে দেওয়া হতো। কারও কারও হাতে ঠোঙায় করে মিষ্টি দিয়ে দিতেও দেখেছি।

সকালের দিকেই দোকানে ভিড় থাকত বেশি। দুপুরের পর ছোটদের মনোযোগ চলে যেত মেলার দিকে। মেলার কথা পাড়তেন বড়রাই। বলতেন, বাজারে মেলা বসেছে। যে বাজার অন্য দিনগুলোয় ছিল কয়েকটি দোকানমাত্র, মেলার দিন সেখানেই অন্তত পঞ্চাশজন নতুন লোক বসতেন পসরা নিয়ে। দুপুরের খাওয়ার পর, সূর্য একটু হেলতেই, সবাই দল বেঁধে যেতাম বৈশাখী মেলায়। দলে ছোটরাই বেশি। আলাদা করে মা-ফুফুরাও যেতেন। অনেকখানি পথ হেঁটে মেলায় যেতে হতো। তবে ‘মেলায় যাচ্ছি’, এই আনন্দে সেই পথ পাড়ি দিতে কষ্ট হতো না।

মেলায় আমার নজর থাকত ডালের তৈরি পাতলা গোল পাঁপড়ের দিকে। ছোট লোহার কড়াইয়ে পাঁপড় ভাজা হতো। ৫ পয়সায় একটা পাঁপড় পাওয়া যেত। মেলায় অনেকে বসতেন জিলাপি, গজা, বাতাসা, কদমা—এসব নিয়ে। সব খাবারের দোকান মেলার একদিকে বসত। মেলার বাকি অংশজুড়ে থাকত নানা রকম পসরা। বেশির ভাগ দোকানি পণ্য নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসতেন। তাঁরা মাটিতে বসেই জিনিস বেচাবিক্রির কাজ করতেন। মেলায় মাটির হাঁড়ি, হাতি, ঘোড়া, পুতুল বিক্রি হতো। কাঠের ঢেঁকি, ঘোড়া—এসবও পাওয়া যেত। পাওয়া যেত চুড়ি, ফিতা, আলতা। বাঁশ ও বেতের জিনিস, বাঁশি, হাতপাখা, কাগজের ফুলও বিক্রি হতো। ছোট-বড় সবার বিশেষ আকর্ষণ ছিল চক্রাকারে ঘোরা নাগরদোলার দিকে।

বৈশাখ উদ্‌যাপনের অনেক রীতি এখনো দেখা যায়। সময়ের বদলের কারণে বৈশাখী মেলায় অনেক পণ্যের বদল ঘটেছে। তা ছাড়া হালখাতার বাস্তব প্রয়োজনও কমেছে। এখন শহর ও গ্রামের যেসব দোকানে হালখাতা করা হয়, তা মূলত ঐতিহ্যের অনুকরণ। এসব রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান কবে থেকে শুরু হলো, খুব নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ঐতিহাসিক নানা সূত্র বলে, মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি চালু হয়। এর সঙ্গে খাজনা পরিশোধের একটা সম্পর্ক আছে। এই সূত্র ধরেই পরে হালখাতা ও পুণ্যাহ চালু হয় বৈশাখ মাসে। নতুন বছরে মেলা আয়োজনের ব্যাপারটিও মোগল আমলের, তবে এটি আরেকটু আগের।

কারও কারও ধারণা, রাজা শশাঙ্কের রাজ্যভার গ্রহণের সঙ্গে বাংলা সনের সম্পর্ক আছে। খ্রিষ্টীয় সাল থেকে বাংলা সন বিয়োগ করলে পাওয়া যায় ৫৯৩। ইতিহাস বলে, খ্রিষ্টীয় ছয় শতকের শেষভাগে কিংবা সাত শতকের প্রথম ভাগে শশাঙ্ক বাংলার রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। তাই মনে হতে পারে, ছয় শতকের শেষ থেকে বাংলা সনের সূচনা হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু এর পক্ষে সংখ্যা ছাড়া আর কোনো জোরালো মত নেই। বরং আকবরের জীবনী ও অন্যান্য সমর্থন থেকে নতুন সাল গণনার সূত্র পাওয়া যায়। আকবরের আমলে সংস্কার করা সালই বাংলা অঞ্চলে বঙ্গাব্দ বলে পরিচিত হয়।

আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন ১৫৫৬ সালে। এর ৩০ বছর পর তাঁর উৎসাহেই ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ প্রবর্তিত হয়। জ্যোতির্বিদ ফতেউল্লাহ শিরাজি নতুন সাল গণনার পদ্ধতি তৈরি করে দেন। অনেকে এটিকে ফসলি সনও বলেন। কারণ, ফসল তোলার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এর হিসাব করা হয়। এর আগপর্যন্ত সরকারি কাজকর্মে হিজরি সনের ব্যবহার দেখা যায়। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে খাজনাও আদায় করা হতো। হিজরি সন সৌরবর্ষের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, প্রতিবছর ১০ দিন করে কমতে থাকে। আর চাষবাসের কাজে কৃষকেরা অনুসরণ করতেন প্রচলিত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের হিসাব। সম্রাট আকবর চেয়েছিলেন, সৌরবৎসরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রাজস্ব আদায় করতে। কারণ, তখন অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। আর কৃষকেরা খাজনা পরিশোধ করতেন ফসল দিয়ে।

খুব সম্ভব শকাব্দের সঙ্গে হিজরি সনের একটা সমন্বয় করা হয়। কারণ, ভারতবর্ষে তখন শকাব্দের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। কাব্যরচনার ক্ষেত্রে কবিরা অনেক সময়ে হেঁয়ালি দিয়ে সালের কথা বলেছেন। সেখানেও শকাব্দের প্রাধান্য। শকাব্দেও বঙ্গাব্দের মতো বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়—এ রকম বারোটি মাস রয়েছে। তবে শকাব্দের বছর শুরু হয় চৈত্র দিয়ে, আর বাংলা সনের শুরু বৈশাখে। যত দূর জানা যায়, একসময় বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্র মানে শুরু, আর হায়ণ মানে বছর। এই নাম থেকেই ধারণাটি আরও জোরালো হয়। আকবরের প্রবর্তিত ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ ভারতের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে। কিছু কিছু পার্থক্যও আছে এসব সালের মধ্যে। তবে পাঞ্জাবি, মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, বাংলা—সব সালেই মাসগুলোর নাম অভিন্ন।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা বাংলা সন সংস্কারের সুপারিশ করেন। তিনি এই কাজে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেন। তাঁর মতের ওপর ভিত্তি করে পরের দশকে বাংলাদেশে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বাংলা সনের আরেক দফা সংস্কার হয়। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন ড.

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বাংলা সনকে ইংরেজি সালের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। পুরোনো হিসাবে, পূর্ণিমার চাঁদ বিশাখা নক্ষত্রে থাকলে সে মাসকে বলা হতো বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে থাকলে জ্যৈষ্ঠ। সংস্কার করা বাংলা সনে এই ভিত্তি থেকে সরে আসা হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত পূজা-পার্বণে পুরোনো পঞ্জিকার বহুল ব্যবহার দেখা যায়।

সাল গণনায় যে সমস্যাই থাক, বৈশাখ উদ্‌যাপনে সর্বসাধারণের আনন্দের ঘাটতি থাকে না। এই উৎসবকে বাঙালি সর্বজনীন উৎসব বলে মনে করে। দেখা গেছে, সুলতানি আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে নববর্ষ উদ্‌যাপনে শাসকেরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। ফলে আয়োজন আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে।

বৈশাখের সবচেয়ে আনন্দময় উদ্‌যাপন বৈশাখী মেলা। এই মেলার সূত্র পাওয়া যায় ‘নওরোজ’ পালনের মধ্যে। নওরোজ হলো ইরানি শাসকদের তত্ত্বাবধানে নতুন বছর উদ্‌যাপনের একটি প্রাচীন ধারা। এতে ছয় দিন ধরে উৎসব পালন করা হতো। আকবরের বাবা হুমায়ুনের সময় উত্তর ভারতে নওরোজ পালনের রেওয়াজ দেখা যায়। সেই ধারায় সম্রাট হুমায়ুন রাজপুরীর ভেতরেই মীনাবাজার বা রকমারি পণ্যে দোকান সাজানোর আয়োজন করতেন।

বৈশাখে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বার্ষিক মেলা আয়োজন হতে দেখা যায় বহু বছর ধরে। এই মেলা এক দিন, তিন দিন, সাত দিন, এমনকি মাসজুড়ে হয়। মেলা উপলক্ষে নাচগান, যাত্রাপালা ও খেলাধুলার আয়োজনও থাকে। সুলতানি আমলে ঢাকায় নতুন বছরে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন জায়গায় পায়রা ওড়ানো, ঘোড়া ও গরুর দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগলড়াই, পুতুলনাচ, বলীখেলা জনপ্রিয় হয়েছে।

বাংলা নববর্ষের আনুষ্ঠানিক আয়োজনের সঙ্গে পুণ্যাহ নামটিও জড়িয়ে আছে। ‘পুণ্যাহ’ জমিদারদের খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠান। জমিদার ও তালুকদারদের কাছে অনুষ্ঠানটির বিশেষ গুরুত্ব আছে। আকবরের শাসনক্ষমতার শেষ দিকে পুণ্যাহ আয়োজন হতে থাকে বৈশাখ মাসে। মাসজুড়েই খাজনা আদায় হতো। গরিব প্রজার কাছে এটি জনপ্রিয় হয়নি। জমিদারি ব্যবস্থার অবসানের পর গত শতকের বিশের দশক থেকে পুণ্যাহ আয়োজনের অবসান ঘটতে থাকে। তবে পুঁজির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে হালখাতা আরও জনপ্রিয় হয়েছে। হালখাতার মধ্য দিয়ে মানুষের সামাজিক সম্পর্কও গাঢ় হয়েছে।

দেশে দেশে নতুন বছর পালনের নানা রকম রীতি দেখা যায়। আজ বাংলা নববর্ষ ও পয়লা বৈশাখ একই অর্থপ্রকাশক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নতুন বছর উদ্‌যাপনের যে রীতি চালু হয়, তার সঙ্গে ঋতুপরিক্রমার একটি ব্যাপার রয়েছে। ঋতুর সঙ্গে বর্ষগণনার যেমন সম্পর্ক আছে, তেমনি সম্পর্ক আছে উৎসব পালনের। উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষ জাতি-পরিচয়ের সম্পর্কসূত্র অনুভব করে, অনুভব করে ঐতিহ্যকে ধারণ করার গৌরব।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আকবর র র একট শতক র করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। অনুদানের চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব সুপারিশ করেছেন; যার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।

ঘটনাকে অনেকেই ‘চাঁদাবাজি’ বলে ফেইসবুকে সমালোচনা করেছেন। তবে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি জানান, অনেকেই তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করে। তাহলে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় সবই চাঁদাবাজি।

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আম্মার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’

আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ

ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাবেক সমন্বয়ক মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।”

কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে।

বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, “রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।”

আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কেএসকে হৃদয়। তিনি ৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের আয়োজক এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।

চিঠির বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার বলেন, “রাবি প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়ার পর তারা জানিয়েছিলেন, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারলেও তারা অন্যান্য সহযোগিতা করবেন। এরপর উপাচার্যের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নগর ভবনে শুধু আমরাই অনুদানের জন্য চিঠি দিয়েছি, তা নয়। বিভিন্ন বিভাগের প্রোগ্রাম আয়োজনের ক্ষেত্রেও সেখানে অনুদান চেয়ে থাকে। আমরা একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করব, সেজন্য সিটি করপোরেশন বরাবর একটা অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সেই প্রোগ্রামের স্পন্সর হিসেবে আমরা তাদের লোগোটা ব্যবহার করব। আর এটাকে যদি কেউ চাঁদাবাজি বলে, তাহলে স্পন্সর নিয়ে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, সবই চাঁদাবাজি।”

এদিকে, সাবেক এ সমন্বকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ‘আমার কিছু কথা ছিল’ শিরোনামে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাবির ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “স্পন্সরশিপের সব টাকা একই প্রতিষ্ঠান দেয় না। সবাই কিছু করে দিলে একটা বড়ো এমাউন্ট হয়। আর্টসেলের মতো একটা টিমের জন্য খরচ, প্লেন ফেয়ার, আপ্যায়ন, শহীদ-আহতসহ ছাত্র-শিক্ষক-জনতা জুলাই যোদ্ধাদের উত্তরীয়, সম্মাননা, ক্রেস্ট, হল ভাড়া, ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা, আল্পনা, ডিজিটাল মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম. লেবার ও স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আপ্যায়ন, ট্রাভেলিং ফ্যাসিলিটির গাড়ী ভাড়া, হোটেল খরচ, চা-কফি-নাস্তা, অন্যান্য পারফরমারদের সম্মানী ও যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে সর্বকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রামে কোটি টাকা খরচ হওয়া অস্বাভাবিক? যন্ত্রীসহ নানান লোকেদের সম্মানী যোগ করলে আরও বাড়ে।”

তিনি আরো লিখেছেন, “আর যেহেতু মিডিয়া পার্টনারের অনেকে মিলে পৃথক পৃথক এমাউন্ট দেয়, কাজেই টাকা সংগ্রহ করে পাওনাদারকে পরিশোধের যে প্যারা তা ভুক্তভোগীই জানে। নিয়ম মেনে অন্যান্য প্রোগ্রামের আয়োজকদের জন্য যে খসড়া বাজেট ও আবেদন, তেমন দেখে আমি নিজেও সুপারিশ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির সুপারিশ না থাকলে কেউ টাকা দিতে আস্থা পায় না। তাহলে এটাকে চাঁদা বলে প্রচার করা অনৈতিক।”

ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো কনসার্ট ও প্রোগ্রাম হয় স্পন্সরশিপ নিয়েই। একেকজন একেকটি পার্ট হিসেবে টাকা দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। রাবিতে স্মরণকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রাম করার কথা ভবিষ্যতে কেউ করতে উৎসাহ পাবে কি না সংশয় রয়েছে। আর সমন্বয়কের চাঁদাবাজি নামক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জুলাই অর্জনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। নিজের গায়ে থুতু ফেলে যারা চাঁটছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।”

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “রেকোমেন্ডেশন চেয়েছে, কিন্তু পায়নি- এমন মনে করতে পারি না। আমি মনে করি, কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রিরা যে উদ্যোগ নেবে, তাতে আমার দিক থেকে সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এটা আমি শুরু থেকেই করে আসছি।”

তিনি আরো বলেন, “আজ ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সোর্স থেকে একের পর এক আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি একদম প্রথম দিন থেকে যেভাবে এই সমস্ত উদ্যোগের সাথে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত যে, এরপর যেকোনো উদ্যোগে সাহায্য করার আগে আমাকে ১০ বার ভাবতে হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
  • চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  • রাউজানে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত
  • রাউজানে বিএনপি নেতা গোলাম আকবরের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০
  • রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গুলি, উত্তর জেলা আহ্বায়কসহ আহত ২০
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার