ঢাকার বনানীতে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির জ্যেষ্ঠ সদস্য ইশরাক হোসেন।

ইশরাক বলেন, তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ইশরাক হোসেন এ কথা বলেন। সমাবেশ আয়োজন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

আরও পড়ুনজাহিদুল হত্যা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতাকে দায়ী করলেন ছাত্রদল সভাপতি২০ এপ্রিল ২০২৫

ইশরাক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এই হত্যার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নাম এসেছে। তাঁদের পুলিশ যেন গ্রেপ্তার না করে, সে জন্য চাপ তৈরি করা হচ্ছে। যাঁরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বাধা দেবে, তাঁদেরও প্রতিহত করা হবে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় ‘বেনসন গ্যাং’ সদস্যদের জড়িত থাকার খবরও জানা গেছে। সমাবেশ থেকে গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাহিদুল হত্যার ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার৪ ঘণ্টা আগে

ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গত শনিবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে জাহিদুল ইসলামকে (২২) হত্যা করা হয়। জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে।

আরও পড়ুন‘সন্তানই যদি না থাকে বাঁইচ্যা থাইকা কী লাভ’২১ ঘণ্টা আগে

এ হত্যার ঘটনায় বনানী থানায় গত শনিবার রাতে মামলা হয়। নিহত জাহিদুলের মামাতো ভাই মো.

হুমায়ুন বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন আল-কামাল শেখ (১৯), আলভি হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল-আমিন সানি (১৯)। তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম দাবি করেন, জাহিদুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকে দায়ী করেন তিনি।

আরও পড়ুনজাহিদুল হত্যা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে ছাত্রদল: উমামা ফাতেমা১৬ ঘণ্টা আগে

রাকিবুলের এ অভিযোগকে ‘ঘৃণ্য মিথ্যাচার’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছাত্রদল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহিদুল ইসলামের গায়েবানা জানাজা১৫ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ছ ত রদল সদস য ইশর ক ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অন্তর্গত মাদারীপুর এলাকায় অবাধে মাদকের ব্যবসা দিনদিন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে মাদারীপুর এলাকাবাসী মাদকের কবল থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদারীপুর জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা করছে। ফলে পুরো এলাকায় বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরায় সাবেক এমপির ছেলে আটক, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

কালীগঞ্জে মাদকবিরোধী সমাবেশ 

স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন অসংখ্য মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এ এলাকায় এসে জড়ো হন। পাশাপাশি, মাদারীপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এই বাড়িটি আগে স্থানীয় মফিজ সাহেবের মালিকানায় ছিল। বর্তমানে সেটা স্থানীয় টুনু সাহেবের ছেলে গাফফার দখল করে রেখেছেন।

তারা জানান, বরিশুর ২৩ ও ২৪ নম্বর এবং ব্রাহ্মণকিত্তা ১ ও ২ নম্বর পিলার ঘিরে প্রতিদিনই চলে মাদকের লেনদেন। এ কারবারে জড়িত রয়েছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণকিত্তা ১ নম্বর পিলারের পাশে বসবাসকারী শামসুদ্দিনের ছেলে আলম, খোয়েজনগরের সালাউদ্দিনের ছেলে রবিন, ড্রাইভারের ছেলে মাহবুব, পটকাজোরের হাকিমের ছেলে অপু এবং মাদারীপুরের জুম্মনের ভাই হিসেবে পরিচিত সোলায়মান অন্যতম।

তবে অভিযুক্তদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম রেজা বলেন, “এ এলাকায় মাদক সমস্যা এখন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

স্থানীয় মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “এখানে শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, এর ফলে এলাকায় চুরি, দস্যুতা, ছিনতাই বেড়ে গেছে। আমরা কেউই নিরাপদ নই। দিনের পর দিন এই অবস্থা চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।”

অপর এক স্থানীয় আবু বকর বলেন, “আমরা একাধিকবার স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু মাদক চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এখন একমাত্র ভরসা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, “এই এলাকাটি একসময় শান্তিপূর্ণ ছিল। এখন সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হওয়াটাও আতঙ্কের বিষয়। প্রতিদিন নতুন মুখ, মাদকসেবী ও অপরাধীদের আনাগোনা। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”

এদিকে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল হক ডাবলু বলেন, “মাদকবিরোধী কার্যক্রমে আমরা সবসময়ই তৎপর। যে এলাকাটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, আমরা সেটি সম্পর্কে অবগত এবং নিয়মিত সেখানে আমাদের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জারি রয়েছে। আজও ওই এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলে আমরা সবসময় সতর্ক ও দায়বদ্ধ।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ