পারভেজ হত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদের ঝড়
Published: 21st, April 2025 GMT
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে প্রকাশ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে তারা বিভিন্ন ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আরো পড়ুন:
কবরের ওপর পড়ে ছিল গৃহবধূর হাত-পা বাঁধা মরদেহ
চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অতীতেও নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন। আমাদের অপরাধ কী? আমরা তো একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। একজন ছাত্রনেতা ও শিক্ষার্থীকে হারিয়ে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
ভবিষ্যতে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশে যেন আর কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের নির্মমতার শিকার না হয়। ছাত্রদল আর কোনো মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্রনেতাকে হারাতে চায় না।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
পারভেজ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিকেল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে মানববন্ধন করেছে কুবি শাখা ছাত্রদল। এতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কালো ব্যাচ ধারণ করতে দেখা গেছে।
এ সময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “যারা পারভেজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিচার চাই। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারা প্রত্যেকেই দেশের শত্রু, জাতির শত্রু এবং তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পায়তারা করছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।”
এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বরে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কুবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, পারভেজ হত্যার বিচার চাই’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, সন্ত্রাসীদের ফাঁসি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)
দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ববি শাখা ছাত্রদল। এতে ববি ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “ছাত্রদল নেতা পারভেজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক সন্ত্রাসী হামলা। এ হামলায় সরাসরি জড়িত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন— আজমাইন সাকিব, মাহমুদ ইমরান, মো. আব্দুল্লাহ নূর কাফি, জিয়াদুর রহমান, এ আরাফাত, ওসমান সাকিব, মো. রিফাত মাহমুদ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জাফর, মো. মিরাজ, মো. হাবিব, মো. হাসান, মো. হোসেন, আলভী, মো. সাকিব মিয়া, তুহিন, সায়মন, তাহমিদ হক মামুন ও সোহাগ প্রমুখ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
দুপুর ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল। এসময় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুন, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবিব, আনারুল ইসলাম, সদস্য সাব্বির হোসেন, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন, রাকিব হোসেন সাক্ষর, উল্লাস মাহমুদ, মুক্তাদির রহমান প্রমুখ।
অন্যদিকে, একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে সমাবেশ করেছে ইবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’, ‘পারভেজ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী, তানভীর মাহমুদ মন্ডলসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
পারভেজ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সকাল সাড়ে ১১টায় কলেজ প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি মহানগর মহিলা কলেজ প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি জসিমউদদীন, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজ
পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেছে সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদল।
এ সময় তাদের ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, খুনিদের ফাঁসি দে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, পারভেজ হত্যার বিচার চাই’, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. রিমু হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন শেষে তারা কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে তুচ্ছ ঘটনায় রাজধানীর প্রাইম এশিয়া ইউভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত পারভেজ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য জ হ দ ল ইসল ম র ন ত কর ম র সদস য স কর ছ ন সরক র এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা অনুষ্ঠানে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে জড়িয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের বড়বাজার এলাকায় ‘সচেতন আলেম ও ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়।
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান, হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান, ওলামা দলের নেতা হাফেজ মিসবাহুদ্দিন তালুকদার, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মুসা শেখ, খেলাফত মজলিসের নেতা মুফতি মো. আব্দুল্লাহ, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেহরুল আলম, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা মাওলানা বীন ইয়ামিন, মাওলানা আবরার ফাহাদ, মাওলানা মোতালিব খান, হাফেজ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুনযদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন: নেত্রকোনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী২৭ জুলাই ২০২৫মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা–৪ (মদন–মোহনগঞ্জ–খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি দলমত–নির্বিশেষে নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার বহু বেকার তরুণ–তরুণীদের চাকরি দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নেত্রকোনার জনগণ মর্মাহত হয়েছেন। এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
গত রোববার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে পথসভা করা হয়। অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় একটি ঘটনা হলো, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, তবে নিয়ে আসছিলেন কেন আপনি? আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় এই অস্ত্রকাহিনির কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘আমি বাবর ভাইকে (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) সম্মান করি, তিনি কারা নির্যাতিত নেতা। কিন্তু আপনার ওই কাজ আমি সমর্থন করি না, করি না, করি না। আপনার এই কাজের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। হাসিনার মতো একজন খুনি ও ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় এসেছিলেন।’ এ নিয়ে ২৭ জুলাই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।