পানি বর্ষণ উৎসবের মাধ্যমে শনিবার শেষ হতে চলেছে সাংগ্রাইং উৎসব
Published: 24th, April 2025 GMT
বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব ‘সাংগ্রাইং’ শেষ হবে শনিবার মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবের মধ্য দিয়ে। শহরের বালাঘাটা এলাকায় দিনব্যাপী এই উৎসবে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে বন্ধনের বার্তা ছড়িয়ে দেবে মারমা সম্প্রদায়।
‘মৈতা রিলং পোয়ে’ নামে পরিচিত এই পানির উৎসবে থাকবে বয়স্ক পূজা, তৈলাক্ত বাঁশে ওঠা, পাহাড়ি পিঠা উৎসব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি।
বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ির মারমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কক্সবাজারের রাখাইনদের মাঝেও এই উৎসব পালিত হয়। সাংগ্রাইং উৎসব শুরু হয়েছিল ১৫ এপ্রিল, এবং জেলা শহরে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পরদিন রাজার মাঠে।
মারমা সমাজের প্রবীণরা জানান, বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে পানি বর্ষণের আয়োজন করা হয় না— এটি একটি ধর্মীয় রীতি। প্রবীণ শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু মারমা বলেন, “পানি মারমা সংস্কৃতিতে অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মীয় এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতীক।”
বাংলাদেশ উদীচি শিল্পীগোষ্ঠীর বান্দরবান জেলা স্যসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ক্যসামং মারমা বলেন, আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে মৈতা রিলং পোয়ে ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে।
এই উৎসবটির উৎপত্তি ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি, যখন কিছু মারমা যুবক মিয়ানমার থেকে এই ঐতিহ্য দেখে দেশে ফিরিয়ে আনেন। ১৯৭৪ সালে বান্দরবান শহরে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসব পালিত হয়।
মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি চথুই প্রু মারমা বলেন, মারমাদের মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে "সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে" (এসো হে সাংগ্রাইংয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণে) এই গানটি দীর্ঘদিন ধরে উৎসবের প্রধান গান হয়ে আছে। এই গানটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন প্রয়াত উপঞা জোত মহাথের। যিনি উ চ হ্লা ভান্তে নামে অধিক পরিচিত।
আগের দিনে তরুণ-তরুণীরা প্রবীণদের পানি দিয়ে স্নান করিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করতেন। সেই টাকা দিয়ে তৈরি হতো উৎসবের পিঠা। সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে উৎসবের ধরন, তবে অপরিবর্তিত রয়েছে তার সৌহার্দ্য ও ঐতিহ্যবাহী তাৎপর্য।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন ব ন দরব ন উৎসব র
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’