মৌলভীবাজারে ৩ দিনব্যাপী মণিপুরী ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব শুরু
Published: 24th, April 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ইউনেস্কো বাংলাদেশের অর্থায়নে লাই লৌখটপা বা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী মণিপুরীদের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘লাই-হরাউবা’ (দেবতাদের আনন্দ) উৎসব শুরু হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেঁতইগাঁও গ্রামের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এ উৎসব শুরু হয়।
‘লাই-হরাউবা’ স্টিয়ারিং কমিটির আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী এ উৎসবে রয়েছে মনিপুরিদের ধর্মীয় ও সংস্কৃতির নানান অনুষ্ঠান। এতে ভারতের মণিপুর থেকে আগত পুরোহিত, নৃত্যশিল্পী, শিল্প পরিচালক, গবেষক এবং সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়াম, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধি, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, উৎসবটি ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রতিদিন মাইবীর ঐশ্বরীক বাণীসহ লোকগান, লোকনৃত্য ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে অনু্ষ্ঠিত হবে।
কমলগঞ্জে তেঁতইগাঁও গ্রামে ‘লাই-হরাউবা’ (দেবতাদের আনন্দ) উৎসব শুরু
মনিপুরী ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব মৈতৈ সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। এটি মূলত, সনামহী ধর্মের ঐতিহ্যগত দেবতাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য উদযাপন করা হয়। এই উৎসবে প্রদর্শিত নৃত্য সমূহকে মণিপুরী নৃত্যশৈলীর একটি সুপ্রাচীন নৃত্যধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মণিপুরী সমাজে প্রচলিত অন্যতম প্রাচীন লোক নৃত্যানুষ্ঠান ‘লাই হরাউবা জাগোই’ থেকেই এসেছে এই ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব।
এই নৃত্যে প্রকৃতি পূজার পরিচয় মেলে। লাই শব্দের অর্থ ইশ্বর, হরাউবা অর্থ আনন্দ এবং জাগোই অর্থ নৃত্য। অর্থাৎ নাচ গানের মাধ্যমে ঈশ্বরকে আনন্দ দান করা।
এর ইতিহাস এরকম- সৃষ্টিকর্তা যখন জড় ও জীব পৃথিবী সৃষ্টি করলেন এবং পরবর্তীকালে স্রষ্টার মূর্তির অনুকরণে মনুষ্য সৃষ্টিতে সফলতা পেলেন তখন দেবদেবীগণ আনন্দে যে নৃত্য প্রকাশ করেছিলেন তারই নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্য। তাই লাই-হরাউবা নৃত্যে দেখা যায় পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে শুরু করে গৃহায়ন, শস্যবপন, জন্ম মৃত্যু- সবকিছুই নৃত্য ও সঙ্গীতের সুর লহরীতে ঝংকৃত হয়। এ নৃত্যের আঙ্গিক অংশগুলো যেমন- লৈশেম জাগোই (সৃষ্টিনৃত্য), লৈতা জাগোই (গৃহায়ন নৃত্য) লৈসা জাগোই (কুমারী নৃত্য) প্রভৃতি মণিপুরী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোক সংস্কৃতি হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে ছয় ধরনের প্রধান ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকলেও বর্তমানে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্য দুই ভাবধারায় পরিবেশিত হয়। এই ভাবধারা দুটি হলো মৈরাঙ লাই-হরাউবা ও উমঙ লাই-হরাউবা। এই দুটি ধারাতেই পরিবশিত হয় নানা ধরনের কাহিনী নির্ভর নৃত্যগীত। এই নাচে তাণ্ডব ও লাস্য উভয়ধারাই ব্যবহৃত হয়। এই নৃত্য শৈব নৃত্যধারার হলেও এতে পরবর্তী সময়ে রাসনৃত্যের ভঙ্গীপারেঙ-এর প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে। এই নৃত্যধারার সাথে জড়িয়ে আছে, মণিপুরের সনাতন ধর্মে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব।
মণিপুরের লোক পুরাণ মতে- ৯ জন লাইবুঙথ (দেবতা) এবং ৭ জন লাইনুরা (দেবী) পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। আদিতে পৃথিবী জলমগ্ন ছিল, আর সেই জলের উপর ৭ জন লাইনুরা নৃত্য করছিলেন। এই দৃশ্য দেখে ৯ জন লাইবুঙথ স্বর্গ থেকে লাইনুরাদের লক্ষ্য করে মাটি নিক্ষেপ করতে থাকেন। নৃত্যরতা ৭ জন লাইনুরা সেই ছুঁড়ে দেওয়া মাটির উপর নেচে নেচে পৃথিবীর স্থলভাগ তৈরি করেন। এই ভাবনা থেকে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্যের সূচনা হয়। এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন মাইবা, মাইবীসহ তার অনুসারীরা।
ইউনেস্কো বাংলাদেশের অর্থায়নে এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, আইজিসিসি, পোরৈ অপোকপা মরুপ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক সংস্থা, কনসোর্টিয়াম অফ ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব বাংলাদেশ (সিআইবি), ও সাধনা - এ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সাউথ এশিয়ান কালচার।
ঢাকা/আজিজ/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব শ র অন ষ ঠ ন এই ন ত য ল ইন র মণ প র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
প্রাগ চলচ্চিত্র উৎসব, ২০২৫ এ বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের পুরষ্কার জিতেছে বাংলাদেশের ওয়ান শট ফিল্ম ‘নট আ ফিকশন’। এটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। এর আগে তিনটি অস্কার এবং দুটি কানাডিয়ান স্ক্রিন এওয়ার্ডস কোয়ালিফাইং উৎসব ঘুরে আসা এই ছবিটি মূলত একটি ঐতিহাসিক দলীল যা গত দুই যুগে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের কিনো পাইলোটু থিয়েটারে গত ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল আসর বসেছিল ফিল্মফ্রিওয়ের র্যাং কিং এ পূর্ব ইউরোপের সেরা হিসেবে খ্যাত এই উৎসবের। উৎসবের এবারের আসরে জমা পরা ৯৫টি দেশের ৩২৬৬টি ছবির মধ্যে অফিসিয়াল সিলেকশন পেয়েছিলো ৭২টি ছবি যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলো এই ছবিটি। গত ২৬ এপ্রিল প্রাগ সময় রাত ৯টায় উৎসবের গালা নাইটে ঘোষণা করা হয় পুরষ্কার বিজয়ীদের নাম যেখানে বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের এওয়ার্ড পায় ‘নট আ ফিকশন’।
এই উৎসবের বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ এর পাম ডি অর স্পেশাল মেনশন ‘শর্ট ফিল্ম’ বিজয়ী নির্মাতা ও অভিনেত্রী গুন্নুর মার্টিনসডোত্তির স্লুটার এবং পোলিশ নির্মাতা এলজবিয়েতা বেঙ্কোভস্কা যার ছবি ‘ওলেনা’ ২০১৩ সালের কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশন ছিলো। এর মাধ্যমেই ইউরোপীয়ান প্রিমিয়ার হলো বাংলাদেশের আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত ছবি নট আ ফিকশনের।
পুরষ্কারটি গ্রহণ করার জন্য প্রাগে গিয়েছিলেন নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। বর্তমানে বার্লিনে অবস্থানরত এই নির্মাতা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘এটাই আমার প্রথম আওয়ার্ড যে কারনে এখনো ঘোর কাটছে না। কাফকার শহরে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারছি এটাই গর্বের বিষয়। তবে এই পুরো জার্নিতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে একজন বিচারকের কথা শুনে, তিনি বলেন আমার এই ছবিটির সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা করছিলো ইউরোপেরই আরেকটি আলোচিত ছবি যার বাজেট প্রায় ৫০ হাজার ইউরো অথচ এওয়ার্ড উইনার হিসেবে ১০০ ইউরোরও কম বাজেটে নির্মিত নট আ ফিকশন কে নির্বাচিত করার পেছনে গল্প এবং নির্মাণের জোরকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তারা, কারন বড় বাজেটের ছবি তো অহরহই হতে থাকে কিন্তু নট আ ফিকশনের মতো কাজ হয় কালেভদ্রে এবং তারা এই ছবিটিকে যথাযথ সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন এখন একটা ভাল সংবাদ দিতে চাই, আগামী ১ মাসের মধ্যেই অনলাইনে মুক্তি পাবে নট আ ফিকশন।’’
নির্মাতা সিজুর সঙ্গে নট আ ফিকশনের সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি এবং লাইলি বেগম। ছবিটির গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন মোকাররম রানা। এছাড়া অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, ঐশিক সামি আহমেদ, রুদ্রনীল আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ এবং মিথুন।