মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ইউনেস্কো বাংলাদেশের অর্থায়নে লাই লৌখটপা বা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী মণিপুরীদের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘লাই-হরাউবা’ (দেবতাদের আনন্দ) উৎসব শুরু হয়েছে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেঁতইগাঁও গ্রামের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এ উৎসব শুরু হয়।

‘লাই-হরাউবা’ স্টিয়ারিং কমিটির আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী এ উৎসবে রয়েছে মনিপুরিদের ধর্মীয় ও সংস্কৃতির নানান অনুষ্ঠান। এতে  ভারতের মণিপুর থেকে আগত পুরোহিত, নৃত্যশিল্পী, শিল্প পরিচালক, গবেষক এবং সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়াম, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধি, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করছেন।

জানা গেছে, উৎসবটি ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রতিদিন মাইবীর ঐশ্বরীক বাণীসহ লোকগান, লোকনৃত্য ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে অনু্ষ্ঠিত হবে।

কমলগঞ্জে তেঁতইগাঁও গ্রামে ‘লাই-হরাউবা’ (দেবতাদের আনন্দ) উৎসব শুরু

মনিপুরী ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব মৈতৈ সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। এটি মূলত, সনামহী ধর্মের ঐতিহ্যগত দেবতাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য উদযাপন করা হয়। এই উৎসবে প্রদর্শিত নৃত্য সমূহকে মণিপুরী নৃত্যশৈলীর একটি সুপ্রাচীন নৃত্যধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মণিপুরী সমাজে প্রচলিত অন্যতম প্রাচীন লোক নৃত্যানুষ্ঠান ‘লাই হরাউবা জাগোই’ থেকেই এসেছে এই ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব।

এই নৃত্যে প্রকৃতি পূজার পরিচয় মেলে। লাই শব্দের অর্থ ইশ্বর, হরাউবা অর্থ আনন্দ এবং জাগোই অর্থ নৃত্য। অর্থাৎ নাচ গানের মাধ্যমে ঈশ্বরকে আনন্দ দান করা।

এর ইতিহাস এরকম- সৃষ্টিকর্তা যখন জড় ও জীব পৃথিবী সৃষ্টি করলেন এবং পরবর্তীকালে স্রষ্টার মূর্তির অনুকরণে মনুষ্য সৃষ্টিতে সফলতা পেলেন তখন দেবদেবীগণ আনন্দে যে নৃত্য প্রকাশ করেছিলেন তারই নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্য। তাই লাই-হরাউবা নৃত্যে দেখা যায় পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে শুরু করে গৃহায়ন, শস্যবপন, জন্ম মৃত্যু- সবকিছুই নৃত্য ও সঙ্গীতের সুর লহরীতে ঝংকৃত হয়। এ নৃত্যের আঙ্গিক অংশগুলো যেমন- লৈশেম জাগোই (সৃষ্টিনৃত্য), লৈতা জাগোই (গৃহায়ন নৃত্য) লৈসা জাগোই (কুমারী নৃত্য) প্রভৃতি মণিপুরী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোক সংস্কৃতি হিসেবে প্রদর্শিত হয়।

সৃষ্টিলগ্ন থেকে ছয় ধরনের প্রধান ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকলেও বর্তমানে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্য দুই ভাবধারায় পরিবেশিত হয়। এই ভাবধারা দুটি হলো মৈরাঙ লাই-হরাউবা ও উমঙ লাই-হরাউবা। এই দুটি ধারাতেই পরিবশিত হয় নানা ধরনের কাহিনী নির্ভর নৃত্যগীত। এই নাচে তাণ্ডব ও লাস্য উভয়ধারাই ব্যবহৃত হয়। এই নৃত্য শৈব নৃত্যধারার হলেও এতে পরবর্তী সময়ে রাসনৃত্যের ভঙ্গীপারেঙ-এর প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে। এই নৃত্যধারার সাথে জড়িয়ে আছে, মণিপুরের সনাতন ধর্মে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব।

মণিপুরের লোক পুরাণ মতে- ৯ জন লাইবুঙথ (দেবতা) এবং ৭ জন লাইনুরা (দেবী) পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। আদিতে পৃথিবী জলমগ্ন ছিল, আর সেই জলের উপর ৭ জন লাইনুরা নৃত্য করছিলেন। এই দৃশ্য দেখে ৯ জন লাইবুঙথ স্বর্গ থেকে লাইনুরাদের লক্ষ্য করে মাটি নিক্ষেপ করতে থাকেন। নৃত্যরতা ৭ জন লাইনুরা সেই ছুঁড়ে দেওয়া মাটির উপর নেচে নেচে পৃথিবীর স্থলভাগ তৈরি করেন। এই ভাবনা থেকে ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্যের সূচনা হয়। এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন মাইবা, মাইবীসহ তার অনুসারীরা।

ইউনেস্কো বাংলাদেশের অর্থায়নে এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, আইজিসিসি, পোরৈ অপোকপা মরুপ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক সংস্থা,  কনসোর্টিয়াম অফ ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব বাংলাদেশ (সিআইবি), ও সাধনা - এ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সাউথ এশিয়ান কালচার।

ঢাকা/আজিজ/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব শ র অন ষ ঠ ন এই ন ত য ল ইন র মণ প র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের হামলা: নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করল ইরান

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ‘ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার জনসংযোগ বিভাগ বলেছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের আকাশসীমা বন্ধ থাকবে।’

আজ শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (ইসলামি বিপ্লবী গার্ড) প্রধান ও দুজন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনতেহরানে হামলা চালাল ইসরায়েল৩ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির মূল কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে তাঁর দেশ।

নেতানিয়াহু বলেন, তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতাঞ্জ শহরে অবস্থিত দেশটির প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের যেসব বিজ্ঞানী দেশটির জন্য (পারমাণবিক) বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন, তত দিন এমন হামলা চলবে।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত ১ ঘণ্টা আগে

এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে একই স্থাপনায় সাইবার হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল ইরান।

আরও পড়ুনইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির মূলকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় ইরানের দুই পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত৫৩ মিনিট আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
  • মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
  • ২৮ বছরেও মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি বাংলাদেশ
  • মধ্যপ্রাচ্যকে ‘অতল গহ্বরে’ পতিত হওয়া রোধে ট্রাম্পের পরবর্তী
  • কী হতে পারে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিণাম
  • অক্সিডেন্টাল টাকা নিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্থানীয়রা
  • ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকে বিচার-সংস্কার সেভাবে প্রাধান্য পায়নি
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
  • পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ 
  • ইসরায়েলের হামলা: নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করল ইরান