লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতাধীন লম্বাশিয়া পাহাড়ে বালুখেকোদের ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই। পাহাড়ঘেঁষে সাতগরিয়া ছড়ায় শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, বালুখেকোদের হাত অনেক লম্বা; তাই তাদের কেউ ঠেকাতে পারছেন না।
গত বৃহস্পতিবার এক কিলোমিটারজুড়ে পাহাড়ে ক্ষতচিহ্ন দেখে আঁতকে ওঠেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শনে যান। তিনি পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক সানাহ উল্লাহ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিএফও মোল্যা রেজাউল করিম, কক্সবাজার উত্তরের ডিএফও মারুফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ, উপকূলীয় বনবিভাগ চট্টগ্রামের ডিএফও বেলায়েত হোসেন, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আতিকুল ইসলাম,  সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী জীববৈচিত্র্যের সহকারী বন সংরক্ষক নূর জাহান।
২০২৩ সলের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালের শেষ পাতায় ‘অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই, কিলোমিটারজুড়ে ক্ষতচিহ্ন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদে টনক নড়ে প্রশাসনের। কাঁটা তার দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন। তখনই বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ বালু উত্তোলন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একদল দুর্বৃত্ত কাঁটা তার তুলে আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। 
জানা যায়, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাতগড় লম্বাশিয়া এলাকায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় আয়াস ও আবুর নেতৃত্বে একদল বালুখেকো। ওই স্থানটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিটের আওতাধীন।
স্থানীয়রা জানান, নির্বিচারে বালু তোলার কারণে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সংরক্ষিত বন মানে শুধু গাছ নয়; এটি এলাকার জলবায়ু, প্রাকৃতিক ভারসাম্য, বন্যপ্রাণী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার প্রতীক। যদি এখনই এ ধ্বংসযজ্ঞ থামানো না যায়, তবে  ভবিষ্যতে সবুজ পাহাড় আর থাকবে না।
জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে ওই এলাকা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি মহল পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। দফায় দফায় অভিযানের পরও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন। গত ৬ আগস্ট দৈনিক সমকালে ‘বালু উত্তোলনে ক্ষতবিক্ষত চুনতির লম্বাশিয়া পাহাড়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকে আবার বালু উত্তোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। আগেও সংবাদের সূত্র ধরে, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর ওই এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালায়। ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে। ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি বালুবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা রাস্তার একাধিক স্থান কেটে দিয়ে লম্বাশিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয় উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ। কয়েক মাস বালু উত্তোলন বন্ধও ছিল। তখন বন ফিরে পেয়েছিল প্রাণ। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে একটি মহল কাটা রাস্তা মেরামত করে পুনরায় ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত ২০ মার্চ ওই এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় পাহাড় কাটা বালু উত্তোলন। এ সময় কাটা হয়েছিল বালু পরিবহনের ৫টি রাস্তা। অভিযানের পর কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও কেটে দেওয়া রাস্তা আবার সংস্কার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর একই স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গভীর গর্তের পানিতে পড়ে মারা যায় একটি বন্যহাতি। ইতোমধ্যে বালুখেকোরা বেশ কয়েকটি পাহাড় ও টিলা সাবাড় করে দিয়েছে। বালুখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
স্থানীয় লোকজন জানান, একসময় লম্বাশিয়া পাহাড় ছিল সবুজে ঘেরা, বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ এক প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল। আজ সেখানে শোনা যায় শুধু ডাম্প ট্রাকের গর্জন আর পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন যন্ত্রের কানফাটা আওয়াজ। এ যেন সংরক্ষিত বনে চলছে পাহাড় ধ্বংসের প্রতিযোগিতা। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে অভিযানে গেলেও তা লোক দেখানো ছাড়া কিছুই না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অভিযানের পর কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে, আবার চালু হয়। কিন্তু জড়িতরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। লম্বাশিয়ায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় কে নেবে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের। তাদর কথা, তাহলে বালুখেকোরা কি প্রশাসনের চেয়ে শক্তিশালী? ওই স্থানটি বর্তমানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলেও পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড় কেটে একাধিক শ্যালোমেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড় ও গাছপালা। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক। বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বিলীন হয়ে যাবে লম্বাশিয়ার সব পাহাড়। আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্যপ্রাণী। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। 
সংরক্ষিত বনে নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। এলাকার নিচে নামছে পানির স্তুর। বেড়েছে ভূমি ক্ষয় ও ধসের ঝুঁকি। শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। আবহাওয়া হয়ে উঠেছে শুষ্ক ও অস্বাভাবিক, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল, বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তন ও খরা প্রবণতা। বর্ষাকালে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জলাধার ও খাবারের উৎস। খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড় কেটে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি উজাড় করা হচ্ছে বনের গাছ। বন দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয় এখন হয়ে উঠেছে মানুষের লোভের লীলাভূমি। বন আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। পাহাড়ের কান্না শুনতে পান না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংরক্ষিত বন যেন এখন কেবল ‘নাম সংরক্ষিত’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতি বারবার ডাকছে ‘আমাকে রক্ষা করো, নয়তো একদিন তোমরাও রক্ষা পাবে না’।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ফয়সল বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের যৌথ অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হলে তারাও অভিযানে অংশগ্রহণ করবেন। ২০২৩ সালে লম্বাশিয়ায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলাও করেছে। সামনেও অভিযান চালানো হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবীর ফাহাদ বলেন, ‘লম্বাশিয়ায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কিছুদিন পরপর অভিযান পরিচালনা করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। বনবিভাগের অনেক কাজ, শুধু লম্বাশিয়া নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এদিকে রয়েছে জনবল সংকটও।’ অপ্রতিরোধ্য বালু সিন্ডিকেট একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করার ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকেই উল্টো এর সমাধান চান ওই কর্মকর্তা।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) 


নাজমুন লায়েল বলেন, লম্বাশিয়ায় সংরক্ষিত বনে পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে বনবিভাগকে সাথে নিয়ে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পুণরায় বালু উত্তোলন শুরু করা হয়। বনবিভাগ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করলে লম্বাশিয়া এলাকায় একটি পাহাড়ও রক্ষা করা যাবে না। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পুণরায় অভিযান পরিচালনা করা হবে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বনব ভ গ র কর মকর ত ২০২৩ স ন বন ধ এল ক য় হ ম মদ র চ নত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ

পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। 

পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। 

একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন। 

এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।

ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।

ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে। 

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর। 

যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ