কানাডায় গাড়ি চালিয়ে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে হত্যার আট অভিযোগ
Published: 28th, April 2025 GMT
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে উৎসব চলাকালে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল রোববার পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। পুলিশ বলেছে, ৩০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ আনা হতে পারে।
গতকাল ভ্যাঙ্কুভারের সড়কে ফিলিপাইনের নাগরিকদের লাপু লাপু উৎসব চলাকালে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আটক সন্দেহভাজনের নাম কাই জি অ্যাডাম লো। তিনি ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা।
ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ বিভাগ বলেছে, অ্যাডাম লোর বিরুদ্ধে হত্যার আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
কাই জি অ্যাডামের বিরুদ্ধে যে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সেকেন্ড ডিগ্রির। ফার্স্ট ডিগ্রির হত্যার অভিযোগের তুলনায় এটি কম গুরুতর হলেও পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়ে থাকে।
গতকাল কাই জি অ্যাডামকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে আবার তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ বলছে, কাই জি অ্যাডাম ইচ্ছাকৃতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন। তাঁর মানসিক সমস্যায় ভোগার ইতিহাস আছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভ্যাঙ্কুভারে হওয়া ওই হামলার পেছনে উদ্দেশ্য কী, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক নেই।
কানাডায় সাধারণ নির্বাচনের এক দিন আগে হওয়া এই গাড়ি হামলার ঘটনা পুরো দেশকে হতবাক করে দেয়। কানাডীয় পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ এবং দীর্ঘদিনের মিত্র ও বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার হুমকির মধ্যে এ নির্বাচন হচ্ছে।
পুলিশপ্রধান স্টিভ রাই বলেছেন, ৩০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ব্যক্তি একটি কালো রঙের অডি এসইউভি চালাচ্ছিলেন।
ঘটনার সময় কানাডায় বসবাসকারী ফিলিপাইনের নাগরিকেরা ভ্যাঙ্কুভারের সানসেট অন ফ্রেজার এলাকায় তাঁদের ঐতিহ্যবাহী লাপু লাপু উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। এসইউভিটি ভিড়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মানুষকে ধাক্কা দেয়।
উপনিবেশবিরোধী ফিলিপাইনের ১৬ শতকের এক নেতাকে স্মরণ করে লাপু লাপু উৎসব উদ্যাপিত হয়ে থাকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।