ঢাকার দোহারে এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জয়পাড়া শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম ৯ জন গ্রাহকের কাছে স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) নামে টাকা জমা নেন। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের টাকা ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। শহীদুল তাদের দুই কোটি ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।
জানা যায়, বিশালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লার ৯০ লাখ টাকা, দোহার পৌরসভার জয়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নাফিস চৌধুরীর ৩৬ লাখ, উত্তর জয়পাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ২০ লাখ, নবাবগঞ্জ উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের শুরগাঁও গ্রামের মাহমুদা আক্তার লাকীর ৩০ লাখ, তাঁর স্বামী বোরহানুল হকের ৩০ লাখ, দোহার খালপাড়ের জামাল আহমেদের ১৫ লাখ, একই এলাকার রোকসানা আক্তারের ৪৫ লাখ, দোহার পৌরসভার উত্তর জয়পাড়া এলাকার ফাতেমা আক্তারের ২১ লাখ ও তাঁর স্বামী নুর ইসলামের ১১ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদুল।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জয়পাড়া শাখার চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাবেক ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলামের নামে দোহার থানায় গত ৪ মার্চ মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দুদক তদন্ত করছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের লিখিত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে না যাওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ও যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি আর কর্মস্থলে যাননি ও অফিসের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। পরে ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও বিভিন্ন আলামত যাচাই করে বোঝা যায় শহীদুল স্থানীয় অনেক লোকজনের সঙ্গে ব্যাংক বহির্ভূত অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে জড়িত। তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হয়েছে। 
ভুক্তভোগী সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা জানান, তাঁর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লাকী এন্টারপ্রাইজের ৯০ লাখ টাকা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জয়পাড়া শাখায় এফডিআর করার জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে একাউন্ট খোলেন। পরে গত ২ মার্চ ব্যাংকে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়ে আরও ১০ লাখ টাকা যোগ করে এক কোটি টাকার এফডিআর করতে আবেদন করেন। এ সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে দেওয়া স্থায়ী আমানতের জমা রশিদ ও সিকিউরিটি চেক গ্রহণ করে অপেক্ষা করতে বলে। কিছুক্ষণ পর তাঁকে জানানো হয়, তাঁর জমা দেওয়া রশিদ ও সিকিউরিটি চেক সবই জাল। এ সময় দায়িত্বরত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল রাকিব তালুকদারের কাছে বিষয়টির সমাধান চাইলে তিনি বলেন, এখন তাঁর কিছুই করার নেই। টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান, এমডি বরাবর এবং দুদক ও দোহার থানায় লিখিত অভিযোগ করতে হবে।
আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, এ ঘটনায় তারা ৯ জন গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারের কাছে তারা এর ন্যায়বিচার চান।
এ বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের বোর্ডে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এখনও লিখিত কোনো আদেশ তাঁর দপ্তরে পৌঁছেনি। আদেশ হাতে পেলে তদন্ত শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক কর মকর ত র জয়প ড় গ র হক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ