সুরা নাজিআত পবিত্র কোরআনের ৭৯তম সুরা। এই সুরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মানুষের মনে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস আনা এই সুরাটির মূল শিক্ষা। এই পৃথিবী, আকাশ ও মানুষের সৃষ্টির পেছনে যে মহান আল্লাহর কুশলী হাত ক্রিয়াশীল এবং তাঁরই প্রদত্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলছে; আবার তাঁরই ইচ্ছায় একদিন সব ভেঙে পড়বে ও আল্লাহর সামনে সবাইকে উপস্থিত করা হবে। নানা ভঙ্গিতে ও নানা যুক্তিতে মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলা হয়েছে। পরকালের প্রতি বিশ্বাসই পারে মানুষকে সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে পবিত্র জীবন-যাপন করাতে।
১ থেকে ২ আয়াতে পাঁচটি গুণবিশিষ্ট সত্তার কসম খাওয়া হয়েছে। ফেরেশতারাও অদৃশ্য এবং কিয়ামত সংঘটন ও বেহেশত-দোজখও অদৃশ্য। অথচ আরবের লোকেরা ফেরেশতাদের অস্তিত্ব স্বীকার করতো। ৩ থেকে ৫ আয়াতে বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনায় ফেরেশতারা নিয়োজিত আছেন। তাঁরা আল্লাহর সব হুকুম পালনে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। ৬ থেকে ১৪ আয়াতে আল্লাহপাকের নির্দেশে ইসরাফিল (আ.
১৫ থেকে ২৬ আয়াতে বলা হয়েছে, আরবের লোকেরা মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণ করেছে এটা নতুন নয়, তেমনি আগের নবীদের সঙ্গেও লোকেরা একই আচরণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ এখানে মুসা (আ.) কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। হেদায়াত দানের লক্ষ্যে আল্লাহ মুসা (আ.)-কে নবুওয়াত দানের পর তাঁকে পাঠান ফেরাউনের কাছে। সে সমাজে জাদুর ব্যাপক প্রচলন ছিল। আল্লাহ মুজিজা হিসেবে মুসা (আ.)-কে একটি লাঠি দান করেন। যা ছেড়ে দিলে বিশাল সাপে পরিণত হয়। ফেরাউন মুসা (আ.)-কে নবী মানতে অস্বীকার করে। সীমালঙ্ঘনের কারণে আল্লাহ ফেরাউনকে দুনিয়াতেই অপদস্থ ও ধ্বংস করেছেন। আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি তো রয়েছেই। ফেরাউনের করুণ পরিণতি দুনিয়াবাসীর জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। ২৭ থেকে ৩৫ আয়াতে পরকাল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৩৪ থেকে ৩৬ আয়াতে মানুষের জন্য আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করে দেওয়ার পরই কেয়ামত সংঘটনের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনসুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।