স্বামী হারিয়ে ২ সন্তান নিয়ে অসহায় গৃহিণী
Published: 11th, May 2025 GMT
সারাদেশে বজ্রপাতের যেসব হটস্পট রয়েছে এর মধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। বৃষ্টি এলেই শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। মুহূর্তেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আকাশ। বিদ্যুৎ চমকালেই দেখা দেয় আকস্মিক বজ্রপাত। এতে মুহূর্তেই ঘটে কৃষক ও শ্রমিকের প্রাণহানি।
হবিগঞ্জে চলতি মৌসুমে বজ্রঘাতে মারা গেছেন ৬ জন কৃষক ও শ্রমিক। আহত হয়েছেন ৩ জন। এদিকে, বজ্রপাতে নিহত স্বামীকে হারিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যোগমায়া দাসের। ২ শিশু সন্তান নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন এখন সেই চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ২৮ এপ্রিল গ্রামের হাওরে ধান কাটায় ব্যস্ত ছিলেন বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন আড়িয়ামুগুর গ্রামের ৪ ভাই। তখনই বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া, আকস্মিক বজ্রপাত। ভয়ে ৪ ভাই একত্রে বসেন। এ সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দুর্ব্বাশ কান্তি দাস। এতে আহত হন তাঁর ৩ সহোদর সুধন্য দাস, ভূষণ দাস ও মোহন লাল দাস। বজ্রপাতে আহত হয়ে মাঠেই পড়ে থাকেন তারা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বজ্রপাতে দুর্ব্বাশ দাসের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। ৫ বছরের ছেলে প্লাবন ও আড়াই বছরের কন্যাসন্তান লাবনী দাসকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। স্বামীর ঋণ পরিশোধ এবং সংসার কীভাবে চালাবেন এটি এখন চিন্তার বিষয়।
দুর্ব্বাশ দাসের স্ত্রী যোগমায়া দাস বলেন, মাঠে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান তাঁর স্বামী। তিনি মারা যাওয়ার আগে অনেক টাকা ঋণ করে টিনশেড ঘর নির্মাণ করেছিলেন।
বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের অংশ ভেঙে যায়। এবার যদি ভেঙে পড়ে কীভাবে মেরামত করবেন সেটিও বুঝতে পারছেন না।
বজ্রপাতে নিহত দুর্ব্বাশ দাসের সহোদর ভূষণ দাস বলেন, চার ভাই একসঙ্গে মাঠে কাজ করছিলেন। বজ্রপাত শুরু হলে পাশেই ছোট ভাই দুর্ব্বাশ মারা যান। নিজেও আহত হয়েছেন। টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারছেন না। সুধন্য দাস বলেন, তাঁর পাশে থাকা দুর্ব্বাশ দাসের ওপর সরাসরি বজ্রাঘাত হয়। বাকিরা একেক দিকে ছিটকে পড়েন। হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, বৈশাখ মাস শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত জেলায় দুর্ব্বাশ দাস ছাড়াও আরও ৫ কৃষক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাদের রহমান বলেন, বজ্রপাতে নিহতদের এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। হাওর এলাকা মনিটরিংয়ের পাশপাশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়ণ ছাউনি ও বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকটিকিটে মাইকেল মধুসূদন দত্ত
‘নাহি পাই নাম তব বেদে কি পুরাণে,
কিন্তু বঙ্গ–অলঙ্কার তুমি যে তা জানি
পূর্ব্ব–বঙ্গে। শোভ তুমি এ সুন্দর স্থানে
ফুলবৃন্তে ফুল যথা, রাজাসনে রাণী।…’
মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুর কিছুদিন আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকায় এসেছিলেন। স্থানীয় পোগোজ স্কুলে ঢাকাবাসী তাঁকে সংবর্ধনা দেন। কবি তখন ঢাকাবাসীকে এ কবিতাটি পড়ে শোনান। (ক্ষেত্রগুপ্ত সম্পাদিত, মধুসূদন রচনাবলী, কলকাতা, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ১৯৪)।
বাংলা সাহিত্যে যে কয়েকজন কবি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁদের একজন। বাংলা কবিতায় তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন। ১৮৬১ সালে প্রকাশিত মেঘনাদবধ কাব্য তাঁর একটি কালোত্তীর্ণ রচনা।
মধুসূদন যশোর জেলার সাগরদাঁড়িতে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কবির জন্মদিন ঘিরে প্রতিবছর সাগরদাঁড়িতে বসে ‘মধুমেলা’। এ ছাড়া আরও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁকে আজও এ দেশের অগণিত মানুষ স্মরণ করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত এই কালজয়ী কবিকে নিয়ে ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছে। ডাকটিকিটের পাশাপাশি উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহরে দেখা যায় কবির উপস্থিতি।
বাংলাদেশ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে বের হওয়া ডাকটিকিটের প্রকাশকাল ২৯ জুন ১৯৯৬। কবির ১২৩তম প্রয়াণবর্ষে প্রকাশিত বহুরঙা (নীল ও কালো রঙের আধিক্য) ডাকটিকিটটি জলছাপবিহীন। মূল্যমান চার টাকা ও ছিদ্রক দূরত্ব ১২ দশমিক ৫ মিলিমিটার। এ ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতির সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলা ও ইংরেজি হরফে তাঁর নাম ও জন্ম ও মৃত্যুকাল। ডাকটিকিটের নকশা করেছেন মোজাম্মেল হক। ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিশ্ব ডাকটিকিটের ক্যাটালগ ‘স্ট্যানলি গিবনস’ মধুসূদনের এ ডাকটিকিটকে বাংলাদেশের ৬০২ নম্বর ডাকটিকিট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে অফসেট লিথোগ্রাফি প্রক্রিয়ায় মুদ্রিত ডাকটিকিটটির কিছু ত্রুটিপূর্ণ মুদ্রণও চোখে পড়ে (নীলের পরিবর্তে হলুদ ও ছিদ্রকবিহীন), যা সংগ্রাহকদের তুমুল আগ্রহের বিষয়। ফিলাটেলির ভাষায় এগুলোকে ‘এরর’ বলে। মধুসূদনকে নিয়ে প্রকাশিত চার টাকা মূল্যমানের এরর ডাকটিকিটগুলো বর্তমান বাজারে পাঁচ–ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ডাকটিকিটের পাশাপাশি উদ্বোধনী খামেও রয়েছে কবির প্রতিকৃতি এবং বিশেষ সিলমোহরে আবারও তুলে ধরা হয়েছে তাঁর নাম ও জন্ম–মৃত্যুকাল।
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে ভারত সরকার ডাকটিকিট প্রকাশ করে ১৯৭৩ সালে। কবির মৃত্যুর শততম বর্ষে প্রকাশিত সেই ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতির পাশাপাশি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় কবির পরিচয় তুলে ধরা হয়। স্ট্যানলি গিবনস ক্যাটালগ অনুসারে এটি ভারতের ৬৮৮ নম্বর ডাকটিকিট। ২০ পয়সা সমমূল্যের ডাকটিকিটটি মুদ্রিত হয় নাসিক সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে। বহুরঙা (সবুজ ও কমলা) ওই ডাকটিকিটে কোনো জলছাপ নেই এবং ডাকটিকিটটির ছিদ্রক দূরত্ব ১৩ মিলিমিটার। মধুসূদনকে নিয়ে ভারতীয় ডাকটিকিটটি মূলত ১৯৭৩ সালের ২১ জুলাই ‘জন্মশতবর্ষ’ শিরোনামে চারজন বরেণ্য ব্যক্তিকে নিয়ে প্রকাশিত সেটের প্রথম ডাকটিকিট। সেই সেটে মধুসূদনের পাশাপাশি অন্য তিনটি ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছেন যথাক্রমে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ বিষ্ণু দিগম্বর পুলষ্কর (১৮৭২–১৯৩১), নরওয়েজিয়ান চিকিৎসক গেরহার্ড হেনরিক আরমাউয়ের হ্যানসেন (১৮৪১-১৯১২), পোলিশ জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৭৭৩–১৮৪৩)। এর মধ্যে হ্যানসেনের কুষ্ঠরোগের জীবাণু আবিষ্কারের শতবর্ষ (১৯৭৩) উপলক্ষে ডাকটিকিটে তাঁকে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে বের হওয়া ডাকটিকিটের প্রকাশকাল ২৯ জুন ১৯৯৬।ভারত থেকে প্রকাশিত মধুসূদনের ডাকটিকিটের জন্য আলাদা কোনো উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে খামের ওপর অন্যান্য ব্যক্তির নামের সঙ্গে কবির নামটিও মুদ্রিত হয়েছে। বিশেষ সিলমোহরে আলাদা করে মধুসূদনের নাম উল্লেখ ছিল না।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আনুমানিক বেলা দুইটায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাত্র ৪৯ বছর ৫ মাস বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এ নাতিদীর্ঘ জীবনের প্রথমার্ধে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি দুর্বার আগ্রহ অনুভব করলেও জীবনের শেষ দিকে এসে অসংখ্য সনেট, কবিতা, নাটক, প্রহসন আর প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ধন্য করে গেছেন তিনি।