ছবি: দীপু মালাকার

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক, বেতন-ভাতাও নেন নিয়মিত!

চাকরি করেন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি না ছেড়ে যোগদান করেছেন একটি মাদ্রাসায়। এভাবে দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন-ভাতা তুলেছেন তিনি। 

এখানেই শেষ নয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই এক নারীকে অফিস সহকারী হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেইসে নাম দিয়েছেন ওই শিক্ষক।

অনুসন্ধানে মহম্মদ মুসা করিম নামের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী, একসঙ্গে একই ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ নেই। অথচ মুসা করিম যেন এর ব্যতিক্রম। তিনি একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মাদ্রাসায় চাকরি করছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে নন-এমপিও কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মহম্মদ মুসা করিম। এরপর ২০১৫ সালে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। 

এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যার ইনডেক্স নম্বর-এম ০০২৭৩৯৫। এনটিআরসিএ নিয়োগ নিয়ে তিনি ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন।

ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ওই বছরের মে ও জুন মাসের বেতন উত্তোলন করেন তিনি। এরপর শারীরিক অসুস্থতা ও প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব উল্লেখ করে ২০২২ সালের ৩০ জুন ওই মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেন মুসা। 

আরও জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ জুলাই ছেঁউড়িয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। সেসময় থেকে তিনি বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত উপস্থিত হন। তবে অবৈধভাবে অতিরিক্ত বকেয়া বেতন তোলার জন্য ভুয়া রেজুলেশন করে অত্র বিদ্যালয়টিতে ২০০৩ সাল তার নিয়োগ দেখানো হচ্ছে। যা শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেইসে নেই। 

এছাড়া নিয়োগপত্র ছাড়াই মোটা অংকের ঘুষ লেনদনের মাধ্যমে প্রিয়া সুলতানা নামের এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে নাম দিয়ে রেখেছেন তিনি।

গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল আলিম বলেন, “২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি সহকারী শিক্ষক হিসেবে মুসা করিম তার প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিল। দীর্ঘ পাঁচ মাস নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসতেন। ওই বছরের মে এবং জুন মাসের বেতন উত্তোলন করে ৩০ জুন পদত্যাগ করে আগের বিদ্যালয়ে চলে গেছেন।”

মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে পতাকা উড়ছে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা কার্যালয় কক্ষে বসে আছেন। এসময় একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বেতন তোলার বিষয়টি স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মুসা করিম। 

তিনি বলেন, “২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। নন এমপিও বিদ্যালয় হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটছিল। সেজন্য এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন চাকরি করেছেন তিনি। দুই মাসের বেতনও তুলেছেন। পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করে বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছেন।”

একইসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা নিয়মবহির্ভূত কি-না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, “নন এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়মের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যায়।”

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) ২০১৩ সালে সহকারী শিক্ষক এবং ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যানবেইসে ভুল আছে। আমার ২০০৩ সালেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ।”

নিয়োগ ছাড়াই অফিস সহকারী পদে প্রিয়া সুলতানার নাম ব্যানবেইসে কীভাবে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন ওই নারী বিদ্যালয়ে আসতেন। ভুল করে ব্যানবেইসে নাম চলে যায়। বর্তমানে ব্যানবেইস থেকে নাম সরানো হয়েছে। বিদ্যালয়েও আসে না আর।” 

এসব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে জানান ছেঁউড়িয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ নেই। খুব শিগগির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।”

প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক, নীতিমালা অনুসারে এক ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা বেতন তোলার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক।

তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবুও সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ