‘বিদায় বেনফিকা’ বলে দিলেন দি মারিয়া, গন্তব্য কোথায়
Published: 18th, May 2025 GMT
মৌসুম শেষে বেনফিকা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আনহেল দি মারিয়া। আর্জেন্টিনার ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা কাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিদায়ী বার্তায় দি মারিয়া লিখেছেন, ‘এই জার্সি পরে চ্যাম্পিয়নশিপে (পর্তুগিজ লিগে) এটিই ছিল আমার শেষ ম্যাচ। আমি গর্বিত যে আবার এটি পরতে পেরেছি। এখনো একটি ফাইনাল (পর্তুগিজ কাপ) বাকি। রোববার (২৫ মে) আমরা সেটি জয়ের জন্য উল্লাস ও উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে নামব। সব সময় যেমন একসঙ্গে ছিলাম, এবারও থাকব। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’
গত রাতে পর্তুগিজ লিগ মৌসুমের শেষ দিনে শিরোপার মীমাংসা হয়েছে। সমান ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে কাল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল শীর্ষ দুই দল স্পোর্তিং লিসবন ও বেনফিকা।
স্পোর্তিং ২-০ গোলে হারিয়েছে ভিতোরিয়া গিমারাইসকে, বেনফিকা ১-১ গোলে ড্র করেছে ব্রাগার সঙ্গে। ফলে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পোর্তিং। ৮০ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয়েছে তাদের নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও দি মারিয়ার দল বেনফিকা।
লিগ জিততে না পারায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন দি মারিয়া, ‘চ্যাম্পিয়নশিপে (পর্তুগিজ লিগে) আমরা যেমন ফল চেয়েছিলাম, তা পাইনি। আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। এমন দীর্ঘ একটি বছর (মৌসুম) এভাবে শেষ হওয়া সত্যিই কষ্টদায়ক।’
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনাকে বিদায় বলা দি মারিয়া বেনফিকায় কত বেতন পান০৮ মে ২০২৫২০০৭ সালে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকাকে দিয়েই ইউরোপে যাত্রা শুরু হয়েছে দি মারিয়া। প্রথম মেয়াদে সেখানে কাটিয়েছেন তিন মৌসুম। এরপর রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, পিএসজি ও জুভেন্টাস মিলিয়ে ১৩ বছর কাটিয়ে ২০২৩ সালে ফেরেন বেনফিকায়।
দ্বিতীয় মেয়াদে বেনফিকার সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেছিলেন দি মারিয়া। গত বছরের আগস্টে চুক্তির মেয়াদ বাড়ান এ বছরের জুন পর্যন্ত। সেটি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট (মুক্ত খেলোয়াড়) হয়ে যাবেন আর্জেন্টিনার হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা এই ফরোয়ার্ড। এরপর কোথায় যেতে পারেন, সেই ইঙ্গিত অবশ্য দেননি।
আগামী রোববার পর্তুগিজ লিগ চ্যাম্পিয়ন স্পোর্তিং লিসবনের বিপক্ষেই পর্তুগিজ কাপ ফাইনালে খেলবে বেনফিকা। ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাবটির জার্সিতে সেটিই দি মারিয়ার শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে।
যদিও বেনফিকার সঙ্গে দি মারিয়ার চুক্তির মেয়াদ ফুরাবে আগামী ৩০ জুন। এই সময়ের মধ্যে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলবে তারা। ম্যাচ তিনটিতে তাদের প্রতিপক্ষ বোকা জুনিয়র্স, অকল্যান্ড সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখ। সিদ্ধান্ত না পাল্টালে ক্লাব বিশ্বকাপে তাঁর খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বেনফিকার হয়ে পাঁচটি ট্রফি জিতেছেন দি মারিয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ত গ জ ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’