সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়: মুজিবুর রহমান
Published: 18th, May 2025 GMT
‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়, আর বিচার ছাড়া অপরাধীদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতারিত হয়েছে এবং সামনের দিনে তাদের ধ্বংস অপেক্ষা করছে। কেউ যদি তওবা করে ভালো মানুষ হয়, হতে পারে; কিন্তু যারা অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। বিচার হওয়ার আগে তাদের কোন অধিকার স্বীকার করা উচিত নয়। আর তারা যেসব অন্যায় কাজ করেছে, সেগুলোকে রেখে নির্বাচন করলে এই নির্বাচন সঠিক নির্বাচন হবে না। এজন্য সংস্কার করতে হবে।’’
শনিবার রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে পঞ্চগড় জেলা জামায়াত আয়োজিত ওয়ার্ড ও ইউনিট সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘বিচার যদি বলে নিরপরাধরা সব অধিকারই ফিরে পেতে পারে, কিন্তু যারা অপরাধী তাদের অধিকার স্বীকার করা মানবতাবাদী কথা হতে পারে না। আমরা সেটাই দাবি করছি- নির্বাচনটা সেভাবেই হবে। উপদেষ্টা সরকারকে আমরা বলেছি, আপনারা সংস্কার করেন, এরপর নির্বাচন দেন। আর বিচার করেন, এরপর সিদ্ধান্ত নেন কারা যোগ্য নির্বাচন করার; আর কারা যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।’’
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসকে ধ্বংস করা হয়েছে কেয়ারটেকার সরকার নিষিদ্ধের মাধ্যমে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকার এনেছে এবং অধ্যাপক গোলাম আজম ছিলেন এই কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার। সেসময় কেয়ারটেকার সরকার দিয়েই নির্বাচন করার বিষয়টি সবাই মেনে নেয়; এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারও মেনে নিয়েছিল। মেনে নেয়ার পর আবার নিরপেক্ষ নির্বাচনকে হত্যা করা হলো সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকারকে বিদায় করার মাধ্যমে।’’
জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা দেলওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।
এ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পঞ্চগড় জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জুলফিকার রহমান, জেলা জামায়াতের মানবসম্পদ বিভাগীয় সভাপতি শাহীদ আল ইসলাম প্রমুখ।
নাঈম//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র রহম ন ক র কর ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’