সামাজিক সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশে ও নিবন্ধনে জিমেইল অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হয়। 
বিশেষ করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জিমেইল দিয়েই বেশির ভাগ গ্রাহক নিবন্ধন করেন। এবার জিমেইলকে লক্ষ্য করে প্রতারণার ছক বুনেছে বিশেষ চক্র। এ কারণে শঙ্কা ছড়িয়েছে জিমেইলে। তৈরি ফাঁদে পা দিলেই ঘটবে বিপত্তি। মুহূর্তেই ব্যক্তিতথ্য হাতিয়ে গ্রাহককে আর্থিক বা সামাজিক ক্ষতির মুখোমুখি করবে অপরাধী চক্র।
তাই আগাম সতর্কতা জারি করেছে জিমেইল কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অন্যতম পরিষেবা হলো জিমেইল। প্রধানত ই-মেইলের দুনিয়ায় জিমেইল অপ্রতিরোধ্য পরিষেবার নামান্তর। সারাবিশ্বে তিনশ কোটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট এখন ফিশিং স্ক্যামের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চলছে দফায় দফায় কৌশলগত ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে গুগল এমন হামলার কথা ইঙ্গিত করেছে। খবরে প্রকাশ, একেবারে নতুন কায়দায় হ্যাকিং বিষয়ে সামনে আনেন কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ। যার মধ্যে নিক জনসন অন্যতম। জানানো হয়, গুগলের নিজস্ব দাপ্তরিক ই-মেইল ক্লোনের পর সেখান থেকে টার্গেট করে গ্রাহকের কাছে কৌশলী বার্তা প্রেরণ করছে সাইবার চক্র; পাঠানো হচ্ছে বিশেষ লিঙ্ক। প্রথমেই সন্দেহ না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিঙ্কে ক্লিক করে বসছেন আগ্রহীরা। ঠিক এভাবেই পাতানো ফাঁদে পড়ছেন গ্রাহক।
প্রসঙ্গত, প্রেরিত লিঙ্কে ক্লিক করতেই মুহূর্তে ক্লোন করা ওয়েব পেজে টার্গেটকে নিয়ে যাচ্ছে সাইবার চক্র। হুট করে বেহাত হয়ে পড়ছে টার্গেটের সব ধরনের তথ্য, যা নিয়ে ইতোমধ্যে কথা বলেছে জিমেইল নির্মাতা গুগল। জানা গেছে, দ্রুত এমন বিপদ এড়িয়ে আরও কঠিন সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পিসি থেকে জিমেইলে প্রবেশে স্মার্টফোনে টু-ফ্যাক্টর নিরাপত্তা সক্রিয় রয়েছে। জিমেইল গ্রাহককেও বাড়তি সতর্কের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে গ্রাহককে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। প্রথমত, সংস্থার নামে আসা সব ধরনের ই-মেইল যাচাই এবং তা থেকে আসা লিঙ্কে না বুঝে ক্লিক করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সব গ্রাহককে দ্বিস্তরের সুরক্ষাবিধি ঠিকঠাক মেনে চলতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বারবার পাসওয়ার্ড বদল ও জটিল পাসওয়ার্ড তৈরিতে গ্রাহককে নতুন করে উৎসাহিত করতে কাজ করছে জিমেইল ডেভেলপ কর্তৃপক্ষ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র হকক

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ