আসন্ন কোরবানি ঈদে নগরী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। শনিবার দুপুরে ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসাবে শপথের দাবিতে ইশরাক সমর্থক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের আন্দোলন চলাকালীন মুঠোফোনে তিনি এই নির্দেশনা দেন। 

গত বৃহস্পতিবার যমুনার সামনে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নিয়ে ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। তবে এই সময়ের মধ্যে সরকার ইশরাক হোসেনকে শপথের উদ্যোগ না নিলে শনিবার সকাল থেকে নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ ভবনের তালা খুলে দেয়নি ইশরাকের সমর্থক আন্দোলনকারীরা। নগর ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। এদিনও নগরীর সেবা প্রার্থীরা করপোরেশনে এসে ফেরত যাচ্ছেন।

এদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকাবাসী'র সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমানের মুঠোফোনে ইশরাক ইশরাক হোসেন উপস্থিত আন্দোলনকারী ও করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
মুঠোফোনেসবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইশরাক বলেন, ‘েআমরা যেহেতু সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম, মাঝখানে শুক্রবার থাকায় সেদিন কোনো কাজ হয়নি। আমরা আজকে আরেকদিন সময় দেবো, এর মধ্যে যার যার কাজ যেটা আছে, সেটা যেন সম্পন্ন করেন। সরকারের গাফিলতির কারণে নগরবাসির যাতে কোনো কষ্ট না হয়। এটা আমি আশা রাখি।’

ইশরাক বলেন, ‘আমার সঙ্গে যখন অন্যয় শুরু করলো এই সরকার, যারা গণঅভ্যুত্থানের সরকার বলে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে সরকার গঠন করে। কিন্তু আমার সঙ্গে যখন সবথেকে বড় বৈষম্যটা করলো, তখন সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়ালে কোনো অপশক্তি আমাদের গ্রাস করে ফেলতে পারবে না। আপনারা যে কারণে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান পাবো।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘সামনে কোরবানি ঈদ। কোরবানি ঈদ পরবর্তী নগরীকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য গুরু দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায়। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যার যার যে কাজ আছে সেটি সবাই করবেন। সরকারের গাফিলতির জন্য নগর ভবনের কোনো অসুবিধা যেন না হয়। আর আপনারা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন সেটি দ্রুত সময়ে ফলাফল পাবেন।’

এ সময় ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের সংগঠন 'ঢাকাবাসী'র সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘এখনও জনতার মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথের প্রক্রিয়া শুরু করেনি সরকার। ফলে আজও নগর ভবনের ঢাকাবাসী আন্দোলন করছেন। আজকের মধ্যে সরকার শপথের প্রক্রিয়া শুরু না করলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে। 

তিনি বলেন,  ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের অনেকেই জুলাইয়ের চেতনা ধারণা করছেন না। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমকে দেশত্যাগে দুর্নীতি দমন কমিশন দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এপিএস তার বসের নির্দেশনা ছাড়া দুর্নীতি করতে পারেন না। হয়তো একদিন দেখা যাবে তার বসকেও (উপদেষ্টা আসিফ) দুদক নিষেধাজ্ঞা দেবে।’

শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাবু সমকালকে বলেন, ‘আদালতের রায়ের আলোকে এখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জনতার মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে আজ কর্মচারী ইউনিয়ন মেয়রের শপথের দাবিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।’

এদিকে আজও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নগর ভবনে এসে ফেরত গেছেন। ভবনের সবকটি ফটকে তালা ঝুলছে। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শুধু আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের মালামাল ট্রাক প্রবেশ করেছে। আর করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেকই নগর ভবনের নিচতলার জরুরি পরিচালনা কেন্দ্রের কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের সচিবসহ অনেকেই এ কক্ষে জরুরি ফাইলপত্র সই করছেন।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.

রাসেল রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিনের মতো আজও নগর ভবন তালাবদ্ধ রয়েছে। এতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগর ভবনে বাবার মৃত্যু সনদের জন্য এসেছেন লহ্মীবাজারের কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে তিনদিন এসে ফেরত গিয়েছি। ভাবছি আজ নগর ভবন খোলা থাকবে তবে আজও বন্ধ। বাবার মৃত্যুর পরে এক ভাই বিদেশ থেকে এসেছেন। তাই বাবার সম্পত্তি সব ভাইদের উপস্থিতিতে বণ্টন করতে চাইছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে পারছি না।

এর আগে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকা বাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ক রব ন ইশর ক হ স ন র নগর ভবন র কর মকর ত র শপথ র অবস থ ন র জন য ক রব ন করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে ওঠানো যাবে ততই মঙ্গল: মির্জা ফখরুল

যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে ওঠানো যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎধীন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। এরপর একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা বলতে চাই, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছে বিএনপি এবং সবচেয়ে বেশি লড়াই যদি করে গণতন্ত্রের জন্য সেটা বিএনপি। বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বিএনপি নিয়ে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রে এবং পরবর্তিকালে সংসদীয় গণতন্ত্রে। সুতরাং এই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশটাকে সকলে মিলে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক ট্র্যাকে ওঠানো এবং যত দ্রুত সেটাকে ওঠানো যাবে ততই মঙ্গল।’

তিনি বলেন, ‘যারা মনে করে যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই- আমার মনে হয়, তারা আবার চিন্তা করবেন। নির্বাচন প্রয়োজন জনগণের জন্য। একটা নির্বাচিত সরকার দরকার, যে সরকার জনগণের সম্পর্ক থাকবে। সেই কারণেই আমরা সংস্কারে অংশ নিচ্ছি। প্রত্যেকটি সংস্কারের দাবি আমরাই তুলেছি। সুতরাং সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা  নেই, দুইটা একসঙ্গে চলবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভিক্টিম আমাদের দল বিএনপি। আমি নিজেও ১১২টা মামলার আসামি এবং ১৩ বার জেলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমরা সবসময়ে মনে করি যে, যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কাজ করেছে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত এবং শাস্তি হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা তিনি এককভাবে, আমি মনে করি দ্য রেসপোসিবল ফর দ্য কিলিং অব দ্য থাউজেন্ডস অব পিপল। তার বিচার শুরু হয়েছে, আমরা আশাবাদী তার এবং তার সঙ্গে যারা গণহত্যার সঙ্গে এবং এই ফ্যাসিস্ট আক্রমণের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরেই বিচার হবে। সেই হিসেবে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দলও যদি দেখা যায়, দলগত হিসেবে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ