বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগ্য হওয়া দূরে থাক, কখনও নিয়োগ পরীক্ষা দেননি। অথচ চাচার সহযোগিতায় জালিয়াতি করে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। এরই মধ্যে দুটি পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন যুগ্ম-পরিচালক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। একটি মামলায় পুলিশি তদন্তে ধরা পড়ার পর বুধবার তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাঁর চাচা বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সবার তথ্য পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে মো.
বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বুধবারও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে আসেন। তবে দুপুরের দিকে নিয়োগ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি হওয়ার পর আর দেখা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ। যতদূর শুনেছেন তিনি বাসায়ও যাননি। তাঁর চাচা শাহজাহান মিঞারও টেলিফোন বন্ধ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী সমকালকে বলেন, তাঁর আপন বোনজামাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করেন। কোনো একটি কাজে সম্প্রতি রাজশাহী অফিসে যান। সেখানে একই নামের নেমপ্লেট দেখে ছবি তুলে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে দেন। তাঁর এই ব্যতিক্রম নামের সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়ায় খুনসুটি করে বলেছিলেন– ‘‘এতদিন পৃথিবীতে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে একজন ছিল। এখন আরেকজনকে পাওয়া গেল।’
তিনি জানান, বুধবার পরিচিত কয়েকজন দুপুরের পর নকল আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর নিয়োগ বাতিলের খবর জানান।
জানা গেছে, কোনো একটি মামলার তদন্তের জন্য আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর বিষয়ে খোঁজখবর করছিল পুলিশ। তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন অসংগতি উঠে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া তথ্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্যে কোনো মিল নেই। সোমবার পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকে এই তথ্য দেয়। প্রাথমিক যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য পায় জালিয়াতির মাধ্যমে ছবি টেম্পারিং করে তাঁকে এই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। যখন এই নিয়োগ হয়েছে, ওই সময় নিয়োগ শাখায় কর্মরত ছিলেন আপন চাচা শাহজাহান মিঞা। ফলে দেরি না করে আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, পুলিশের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া একজন নারী কর্মকর্তার বাবার ভুয়া সনদ প্রমাণিত হওয়ার তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গেও শাহজাহান মিঞার নাম এসেছিল। এর আগে একজন নির্বাহী পরিচালক টেম্পারিং করে বয়স বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। তিনটি ঘটনার সময়ই গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে কারণে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া প্রতিটি নিয়োগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও এখনও এ বিষয়ে অফিস আদেশ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মো. শাহজাহান মিঞার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন য় গ ব ত ল কর শ হজ হ ন ম ঞ কর মকর ত তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
রাস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা
রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।”
দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।”
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/শান্ত