একই স্থানে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে দু’পক্ষের উত্তেজনা
Published: 29th, May 2025 GMT
কালিয়াকৈর উপজেলায় একই স্থানে দুই পক্ষের কোরবানির পশুর হাট বসানো নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের জামালপুর চার রাস্তা এলাকায় এ হাট বসানো হয়েছে।
বুধবার সরেজমিন জানা যায়, জামালপুরে ১৪-১৫ বছর আগে এলাকার শতাধিক ব্যক্তি সমবায় সমিতির মাধ্যমে গরুর হাট বসান। এর আয় দিয়ে সমিতির নামে ২০ শতাংশ কেনা ও বনের জমিতে প্রত্যেক শনিবার পশু বেচাকেনা চলে আসছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী হাটটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি টেন্ডারের মাধ্যমে ভ্যাটসহ ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তি ইজারা নেন। এরপর তিনি হাট বসাতে গেলে সমিতির পক্ষে মো.
লুৎফর রহমান ৩০ ফুট দূরে একটি পতিত জমিতে হাট বসিয়ে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করেন। সমিতির পক্ষে সাবেক ইজারাদার নওজেস আলীর লোকজন পুরোনো হাটের জায়গায় অনুমোদন ছাড়া অস্থায়ী হাট বসিয়ে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করলে গত শনিবার দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় লুৎফর রহমান নওজেস আলীসহ চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও অস্থায়ী গরুর হাটের অনুমোদন না দিতে আবেদন করেছেন। সফিপুর এলাকার ক্রেতা হাসান খান, খবির উদ্দিন, ভান্নারা এলাকার রাহাজ উদ্দিনের ভাষ্য, শনিবার গরু কিনতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন তারা। একটি হাট হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য ভালো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মাহমুদ, শরবেশ আলী, আনোয়ার হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের আমলে নওজেস আলীর লোকজন সমিতির নামে এককভাবে হাট ইজারা নিয়েছে। এবার ইউএনওর দপ্তরে টেন্ডার হয়েছে। লুৎফর রহমান ইজারা পেলেও নওজেসের লোকজন অস্থায়ী হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। গত শনিবার হাতাহাতি হয়েছে। আগামী শনিবারও মারামারির আশঙ্কা রয়েছে।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অস্থায়ী ইজারা এনেছেন দাবি করে নওজেস আলীর বড় ছেলে অস্থায়ী হাট বসানোর উদ্যোক্তা নিজাম আলী বলেন, ‘আমরা সাত দিনের জন্য হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছি।’ যদিও অস্থায়ী ইজারার অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি তাতে রাজি হননি।
ইজারাদার লুৎফর রহমান বলেন, ‘জামালপুর গরুর হাটটির সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় ইউএনও বিধি মোতাবেক আমাকে ইজারা দিয়েছেন। নিয়ম অনুসারে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী হাট বসাতে পারবে না। এখানে অস্থায়ী হাট বসালে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
মধ্যপাড়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছান আলী বলেন, ‘কোনো পক্ষই অনুরোধ না মেনে ৩০ ফুটের মধ্যে দুটি হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।’
অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর আবেদন পেয়েছেন জানিয়ে ইউএনও কাউছার আহামেদ বলেন, হাটটি সরকারিভাবে লুৎফর রহমান ইজারা নিয়েছেন। এর পাশে আরেকটি বসানোর সুযোগ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ৎফর রহম ন র ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।