রংপুরে জাপা নেতার আলটিমেটাম, পাল্টা কর্মসূচি এনসিপির
Published: 29th, May 2025 GMT
রংপুর সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ সময় অপসারিত মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দাবি আদায় না হলে ঈদের পর রংপুরকে অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। তার এই বক্তব্যে রংপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বুধবার রাতে তারা পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
এনসিপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর-দালাল-ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেন। এ সময় তারা অপসারিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তাদের প্রতিহত করতে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এর আগে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাত ৯টায় রংপুর প্রেস ক্লাব এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগর ভবনের দিকে অগ্রসর হয়ে পরে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা আজ রংপুরে মিছিল করেছে। মিছিলে তারা বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পুনর্বহাল করতে হবে।
প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়ে এনসিপির এই সংগঠক বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, তারা (জাপা) আবু সাইদের রংপুরে কীভাবে মিছিল বিক্ষোভ করার সাহস পায়? মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের দোসর-চামচাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা নাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘খুনি হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর ছিল জাতীয় পার্টি। তারা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে গুম-খুনসহ সকল অন্যায়ের সহযোগী হয়েছিল। সুবিধাভোগী জাতীয় পার্টির রাজনীতি করার আর কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের মতো অবিলম্বে এই জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
এর আগে বুধবার দুপুরে রংপুর সিটির অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে সিটি পরিষদকে পূর্বের মতো কার্যকর করবেন বলে প্রত্যাশা করি। আর যদি না করেন তাহলে ঈদের পরে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মঞ্চ বসিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প এনস প আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
দেশের প্রতি চারজনের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন। আলোচক ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিবিএসের ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য ব্যবহার করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) নিরূপণ করা হয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হলো দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি, যা শুধু আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দারিদ্র্যকে তার বিভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের এ সূচকে তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মাত্রাগুলোকে ১১টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়েছে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি, বাসস্থান, রান্নার জ্বালানি, সম্পদ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর শহরে ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রধান অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এমপিআই-কে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি নতুন ও উদ্ভাবনী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। তিনি এ সূচককে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ ছাড়া কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমপিআই ব্যবস্থাটি আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। সভাপতির বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান, জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করবে এবং নীতিনির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।