চট্টগ্রামে প্রথম জোড়া লাগানো যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার
Published: 29th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো জোড়া লাগানো যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর দুই নবজাতকই সুস্থ রয়েছে। ৬ মে নগরের অ্যাপোলো ইমপিরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় যমজ এই শিশুদের। পরদিন ৭ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়।
সাতকানিয়ার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম যমজ এই সন্তানদের জন্ম দেন। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে রিয়াশাদ জাফর চৌধুরী ও রেনিশ জাফর চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার নবজাতক দুটিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নগরের অ্যাপোলো ইমপিরিয়াল হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জন আদনান ওয়ালিদ। তিনি জানান, এটি তাঁর প্রথম এ ধরনের অস্ত্রোপচার হলেও আগে ঢাকায় শিশু শিফা ও রিফাকে আলাদা করার সময় তিনি পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন। এবার তিনি পুরো চিকিৎসা দলের নেতৃত্ব দেন। জন্মের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে শিশু দুটির অস্ত্রোপচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোড়া লাগানো শিশু আলাদা করার ঘটনা বলে দাবি করেন তিনি।
আদনান ওয়ালিদ বলেন, ‘এটি ছিল অত্যন্ত জটিল একটি অস্ত্রোপচার। দুই নবজাতকের বুক ও পেটের অংশ প্রায় আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল। শ্বাসনালির একটি অংশও একসঙ্গে ছিল। আমরা ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করেছি। অবেদনবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন চিকিৎসক এতে অংশ নেন এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে।’
দ্রুত অস্ত্রোপচারের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শিশু দুটির ওজন কম ছিল, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সফল ফল পাওয়া গেছে।
প্রসূতিবিশেষজ্ঞ রেশমা শারমিন বলেন, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে শিশু দুটি জোড়া লাগানো বলে ধরা পড়ে। পরে আরও দুবার আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা। গর্ভাবস্থায় এক শিশুর রক্ত সঞ্চালন কম পাওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটিকে। জন্মের সময় তাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম। বর্তমানে ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, ডেপুটি চিফ অব মেডিকেল সার্ভিসেস ফজল-ই-আকবর ও অবেদনবিদ মো.
ওয়াহেদ মালেক বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এমন একটি জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে করতে পেরে আমরা গর্বিত। জোড়া লাগানো শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় অপারেশনের পরও তাদের বাঁচানো যায় না। তবে আমাদের নবজাতক দুটি সুস্থ আছে।’
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি দুই লাখ শিশুর মধ্যে একজন এভাবে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্মায়। এদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একত্রে সংযুক্ত থাকায় ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, চট্টগ্রামের এই দুই নবজাতকের ক্ষেত্রে এমন শঙ্কা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিশুদের বাবা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী রিয়াজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে যখন বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন থেকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চিকিৎসকেরা সাহস জুগিয়েছেন, তাঁদের কারণেই আমরা এই অস্ত্রোপচারে সম্মত হই। এখন আমরা দুই সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।’
শিশুদের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘মনে হয়েছিল মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। পরে চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সাহস দেখে আমরা ধীরে ধীরে ভরসা পাই। তাঁদের জন্যই আজ আমাদের সন্তান দুটিকে নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে বেড়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি, ফাঁকা আশ্রয়কেন্দ্র
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বেড়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি। এরই মধ্যে শুক্রবার (৩০ মে) সকালে রাঙামাটি শহরের যুব উন্নয়ন এলাকার একটি ঘরের ওপর ধসে পড়েছে পাহাড়ের মাটি। অধিকতর ধস এড়াতে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্থানটি।
শুধু যুব উন্নয়ন এলাকাই নয়; ছোট ছোট ধস হয়েছে লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন ও মোনাদাম এলাকায়। মাটি রক্ষার জন্য দেওয়া বস্তা ধসে ঢুকে গেছে ঘরের ভেতর।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে উপজেলা পরিষদের সামনে আর্মি ক্যাম্পের সৌন্দর্য বর্ধনকারী কৃষ্ণচূড়া গাছটি উপড়ে পড়েছে। এতে যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরো পড়ুন:
আর কতদিন থাকবে বৃষ্টি?
রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টি বিকেলেও অব্যাহত, জলাবদ্ধতা নেই চট্টগ্রামে
এদিকে, ধস প্রবণ এলাকা থেকে সরেননি বাসিন্দারা। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। শুধুমাত্র লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১৪ পরিবারের ৬২ জন। রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসলেও দুপুর পর্যন্ত খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।
লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা মনোয়ারা বেগম বলেন, “রাতে বাসা থেকে খেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো এখানো খাবার দেয়নি। বাচ্চাদের নিয়ে আছি। সারা রাত অনেক বৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বাড়ির আশপাশের কিছু মাটি সরে গেছে। বাসায় যেতে ভয় পাচ্ছি।”
একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা আইয়ুব খানও খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “রাতে এখানে আসি। বিভিন্ন লোকজন খোঁজ নিচ্ছে, তবে কেউ খাবার দেয়নি। জেলা প্রশাসন থেকে সব ব্যবস্থা করবে বলা হলেও কিছুই পাচ্ছি না।”
রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমা বলেন, “রাঙামাটি সদরে ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও শুধু লোকনাথ মন্দির আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ পরিবারের ৬২ জন মানুষ অবস্থান করছেন। তালিকা অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত) রাঙামাটি জেলায় ১৪০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
ঢাকা/শংকর/মাসুদ