নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সারা দিন কখনো মাঝারি, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। সকাল ১০টার দিকে কিছু সময় বিরতির পর দুপুরের পর আবারও বৃষ্টি শুরু হয়। এতে রাঙামাটি শহরসহ আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

গতকাল মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে ও গাছ উপড়ে সড়কে পড়েছে। ফলে কিছু সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পৌরসভা এলাকায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬টি পরিবারের অন্তত ৭০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের জন্য শুকনা খাবার ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রাঙামাটি কার্যালয়ের স্টেশন কর্মকর্তা ক্যাহ্ল চিং মারমা বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় ১৪০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামীকাল ভারী বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে তিনি জানান।

শহরের বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে রাঙামাটি উপজেলা পরিষদের সামনে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে একটি গাছ উপড়ে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

রাঙামাটি রোভার স্কাউটসের সভাপতি মো.

নুরুল আবছার জানান, উপজেলা পরিষদের সামনে একটি গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাছ সরানোর কাজ শুরু করেন।

শহরের ভেদভেদী-আসামবস্তি সড়কের যুব উন্নয়ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই এলাকায় সড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ধসে পড়া পাহাড়ের নিচে চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ঝুঁকিতে পড়েছে। নতুনপাড়া, মুসলিমপাড়া, বিদ্যানগর, রূপনগর, শিমুলতলীসহ বেশ কিছু এলাকায় পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেছে।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান ও মানিকছড়ি এলাকায়ও বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা ধসে পড়া মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। ধসে পড়া মাটি সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি শুরুর পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা তদারকির কাজ করছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পৌর এলাকায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গতি কম, ভোগায় বেশি

পুরো সড়কেই ছোট-বড় গর্ত। ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের অনেক অংশ দেবে গেছে। এই সড়কে এখন যানবাহনের চলাচল দুষ্কর। যাও চলে তার গতি কম, তবে যাত্রী ভোগায় বেশি। এভাবেই মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কের অবস্থা বর্ণনা করছিলেন স্থানীয়রা। এ সড়কের কোথাও কোথাও পিচ উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। সড়কটির করুণ অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে তাদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। এ অবস্থায় সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণ ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। তারা সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কটি বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে শুরু হয়ে দৌলতপুর বাজার হয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার থানাবাজারে গিয়ে বিয়ানীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এক সময় শাহবাজপুর থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ছিল। বর্তমানে এটি মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে রয়েছে।

দৌলতপুর ব্রিজের কানলী এলাকা থেকে  থানাবাজার পর্যন্ত সড়ক সিলেট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কে কোনো ধরনের সংস্কারকাজ হয়নি। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে এলেও কেউ আমলে নিচ্ছে না। 

গাড়িচালক কবির আহমদ বলেন, শাহবাজপুর-থানাবাজার সড়কের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্ট হয় রোগীদের নিয়ে যাতায়াতের সময়। কয়েক দিন আগে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়ি গর্তে পড়ে ঝাঁকুনিতে তাঁর সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।

অটোরিকশা চালক আবু সাঈদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই সড়ক দিয়ে তারা গাড়ি চালাতে গিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। যেখানে আগে সড়ক পার হতে ২০ মিনিট সময় লাগত, এখন প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

শিক্ষার্থী ছাইদুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি শুধু একটি যোগাযোগের পথ নয়, এটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, ব্যবসা ও জরুরি সেবার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এখন তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কাওছার হামিদ ছুন্নাহ বলেন, সড়কের বেহাল দশায় মানুষ অতিষ্ঠ। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই সংস্কারকাজ শুরু হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলে অস্তিত্বহীন খালে কালভার্ট
  • গতি কম, ভোগায় বেশি