Samakal:
2025-06-01@01:41:08 GMT

বিষমুক্ত দেশি ফল তাল শাঁস

Published: 30th, May 2025 GMT

বিষমুক্ত দেশি ফল তাল শাঁস

নাটোরে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। মধু মাসখ্যাত বাংলার জ্যৈষ্ঠ মাসে এই তাল শাঁস বাজারে আসে। এই মধু মাসে রসালো আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু অন্যান্য ফলের সমাগম হয়। তবে এসব ফলে ফরমালিন ও কীটনাশক ছিটানো হলেও তাল শাঁসে ফরমালিনের কোনো বিষ থাকে না। এ কারণে মানুষের কদর বাড়ছে তাল শাঁসে। অপরিপক্ব এই তালের শাঁসকে স্থানীয় ভাষায় তালকুড় বলা হয়। তালের শাঁসের পুষ্টিগুণও রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা’ খান মঈনুদ্দীনের ‘কানা বগির ছা’ ছড়াতে গাঁয়ের তাল গাছে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক, তাল গাছগুলো কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। তাই গাছে কচি তাল ভরে উঠতে দেখে গাছি বা ব্যবসায়ীরা এসব কচি তাল কিনে হাট-বাজারে তাল শাঁস বিক্রি করেন। 
একমাত্র ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকালের পুরো বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠের শুরুর দিকে যেমন কাঁচা আম পাওয়া যায় তেমন জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায় রসালো আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু। এ কারণে এই মাসকে মধু মাস বলা হয়। এই মধু মাসে মৌসুমি ফল আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর পাশাপাশি পাওয়া যায় তালের নরম শাঁস। রসে ভরা এসব ফল সুন্দর ও তাজা রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন বা রাসায়নিক মিছিয়ে দেন। ফলে এসব ফল বিষ যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ সব কারণে মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন পুষ্টিগুণসম্পন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল তালের শাঁসে (তাল কুড়)। তাই কদরও বেড়েছে এই ফলের।
তাল কুড় বিক্রেতা মো.

খোকন আলী জানান, গ্রীষ্ণ মৌসুমে তিনি প্রতিদিন সদর উপজেলার ঠাকুর লক্ষিকুল গ্রাম থেকে তাল বিক্রি করতে শহরে আসেন। প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ তাল নিয়ে আসেন। তিনি প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে নিয়ে আসেন। গাছে উঠতে কষ্ট হলেও ওই গাছ থেকে তাল তাদেরই পাড়তে হয়। হাট-বাজারে নিয়ে তারা তাল কেটে বের হওয়া নরম শাঁস বিক্রি করেন। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে তাল কুড় থাকে। 
সদর উপজেলার পাইকেরদোল এলাকার মাহতাব বলেন, তিনি মৌসুমের আগে তাল গাছ কিনে থাকেন। একেকটি গাছ তিনশ থেকে চারশ টাকায় কেনেন। প্রতিদিন ওই সব গাছ থেকে তাল নামিয়ে এনে বাজারে তালের শাঁস বা তালকুড় বিক্রি করেন। ২শ থেকে ৩শ পিস তালের শাঁস বিক্রি করেন। একটি তালে সর্বোচ্চ তিনটি করে তাল শাঁস থাকে। বিষমুক্ত ও পুষ্টিগুণ হওয়ায় এই তালকুড়ের চাহিদা বেড়েছে। বিক্রেতাদের অনেকেই বিভিন্ন হাটবাজারে, অটোরিকশা, অটো ভ্যানস্ট্যান্ড এবং অলিগলিতে তালের শাঁস (তালকুড়) বিক্রি করেন। ফেরি করেও বিক্রি করেন কেউ কেউ।
শহরের বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান মাসুদ এবং আবু মুসা নামে দুই ক্রেতা বলেন, বর্তমানে বাজারে অধিকাংশ ফল-ফলাদি ও শাকসবজিসহ মাছ-মাংস সব কিছুই কোনো না কোনোভাবে ফরমালিন বা কীটনাশক ছিটিয়ে বাজারজাত করা হয়; যা মানুষের শরীরের জন্য বিষ।  তালের শাঁস বা তালকুড়ে ভেজাল কিছুই থাকে না । শতভাগ নেচারাল ফল এবং পুষ্টিগুণও রয়েছে এতে। এ কারণে এখন অনেকেই এই তালকুড় খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই তালকুড় কাটার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতার সামনেই খান। অনেকেই পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যান। এই ফল এখন সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয় খাদ্য। ফলটা লোভনীয় হওয়ায় বাজারে এখন এ তালকুড়ের চাহিদা বেড়েছে। পরিবারের জন্য পার্সেল করে বাসায় নিয়ে যান।
নাটোর সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত আরএমও ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তাল শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি ও মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। এছাড়া তালে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বিসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে।’ v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফরম ল ন এই ত ল র জন য অন ক ই ত লক ড়

এছাড়াও পড়ুন:

জুনে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা

ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। মে মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, রয়েছে ভ্যাপসা গরমও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য খুবই অনুকূল। ঈদুল আজহার আগে বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ঠিকঠাক হবে না। ফলে ঈদের পর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গত বছর বা তার আগের বছর সক্রিয় ছিল ডেঙ্গুর সেরোটাইপ ডেন-২ এবং কিছু এলাকায় ডেন-৩ ধরন। এ বছরও এ দুটি থাকলে তত বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেরোটাইপ ডেন-১, ৪ কিংবা ৩ বেশি সক্রিয় থাকলে শুধু রোগী নয়, গুরুতর রোগী বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর বাহক নিধনে অভিযান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকারের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব নয়, জনগণকে যুক্ত করে সারাদেশে অভিযান চালাতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ঈদের পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগী গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ। গত বছর মে মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৬৪৪, মারা যান ১২ জন। গত ৩১ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তিনজন। এ বছর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। মারা গেছেন ২৩ জন, যার ১১ জনই ঢাকা মহানগরীর। এর মধ্যে জানুয়ারিতে শনাক্ত ১ হাজার ১৬১, মৃত্যু ১০ জনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৭৪, মারা যান তিনজন। আর এপ্রিলে ৩৩৬ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় সাতজনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আছেন ৩৬৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩ হাজার ৯৮২ জন। বর্তমানে ঢাকা মহানগরে ভর্তি রয়েছেন ৯০ জন। সর্বোচ্চ ২০ জন রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুম একটু আগেভাগে আসায় দুটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে এডিস মশার লার্ভা ও ডিম ভেসে যাওয়ায় ঝুঁকি কমবে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে গেলে যেসব জায়গায় পানি জমে থাকবে, সেসব স্থানে লার্ভা জন্মের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এ জন্য শুধু মশক নিধন নয়, পানি নিষ্কাশনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মাসভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এখন পর্যন্ত এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বড় কর্মসূচি দেখা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করায় কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, আমরা সপ্তাহে একবার কীটনাশক সরবরাহ করি। নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মীদের বলা হয়েছে, হাতে থাকা ওষুধ যেন তারা রেশন করে চলেন।

ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালে রোগী কম আসায় অনেকটাই উপেক্ষিত সেই নির্দেশনা। ঢাকার কোনো হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট করা হয়নি।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সার্ভেতে আমরা দেখেছি, গত বছরের মে মাসের তুলনায় এবার চলতি মাসে মশার ঘনত্ব বেশি। এবার রোগীও বেশি। মনে হচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটি আছে। বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যেতে পারে।

ঢাকার বাইরের চিত্র

চট্টগ্রামে মৌসুমের আগেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গু। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এপ্রিলে ৩৩, মার্চে ২২ ও ফেব্রুয়ারিতে ২৮ রোগী শনাক্ত হয়। গত বছর মে মাসে ডেঙ্গু হয়েছিল মাত্র ১৭ জনের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন বছরজুড়েই থাকছে মশার উপদ্রব। অথচ গত ছয় মাসে মশক নিধন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সর্বশেষ পরিচালিত জরিপে ডেঙ্গুর হটস্পট চিহ্নিত এলাকায়ও মশক নিধন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ তাদের।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করছি। পরীক্ষিত পদ্ধতি হিসেবে বিটিআই লার্ভিসাইড নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ