চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তর। পুরাতন জমিদার বাড়িটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ১৩৫ টাকা। 

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তরের রাজশাহী ও রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান সাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এতথ্য নিশ্চিত হয়েছে রাইজিংবিডি ডট কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কানসাটের জমিদার বাড়িটি শিবগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ি নামে পরিচিত। বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে জমিদার বাড়িটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে ছিল। যার কারণে ধ্বংসের মুখে রয়েছে। এরপরই শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনটি আবর্জনা সরিয়ে পরিষ্কার করা হয়। 

সম্প্রতি কানসাটের পুরাতন বাড়িটির ঐতিহ্য ফেরাতে ব্যক্তিক্রমী উদ্যোগ সাইকেলে র‌্যালির আয়োজন করে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসী। স্থানীয়রা বলছেন, এটি সংস্কার করা হলে কানসাট জমিদার বাড়ি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার সুযোগ আছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তরের একপত্রে উল্লেখ করা হয়- কানসাট জমিদার বাড়িটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে আংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিলেন বগুড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.

আর এন্টারপ্রাইজ। ফলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিতে জমিদার বাড়িটি মেরামতের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রাক্কলন ও প্রাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ১৩৫ টাকা। এই কাজের তদারকির দায়িত্বপালন করচেন সহকারী প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকৌশলী হাসনুল হাবীব। কার্যাদেশ পাওয়ার পরের ৩০ দিনের মধ্যে যথাযথভাবে জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

স্মারক পত্রটিতে এইও উল্লেখ করা হয়- কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি যথাযথভাবে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিন ০.০৫ শতাংশ হারে জরিমানা কর্তনসহ সিডিউলে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কানসাট এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন জাকির বলেন, ‘‘কানসাট জমিদার বাড়ির পাশেই বসে দেশের সর্ববৃহৎ আমবাজার। আমের মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন এখানে। রাজবাড়িটি দ্রুত সংস্কার করলে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।’’

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিক আজিজ বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তরের উদ্যোগে কানসাট জমিদার বাড়ি সংস্কারের কাজ শুরু হবে শিগগির। এরমাধ্যমে বাড়িটির বাউন্ডারি ও ভবনটি দালান, দরজা ও জানালা সংস্কার করা হবে। বাকি যেসব কাজ থাকবে সেগুলো পর্যায়ক্রমে শেষ করে কানসাট জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।”

জমিদার বাড়ির ইতিহাস
১৮৬৭ সালে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে নির্মাণ করা হয় এই জমিদার বাড়ি। এটি স্থানীয়ভাবে ‘রাজবাড়ি’ নামেও পরিচিতি। ময়মনসিংহের জমিদার সূর্যকান্ত ২ দশমিক ২৪ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন বাড়িটি। দ্বিতল বিশিষ্ট এই বাড়িতে রয়েছে ১৬টি কক্ষ। 

জমিদার সূর্যকান্তের ছোট ছেলে শীতাংশুকান্ত সর্বশেষ জমিদার ছিলেন। তিনি ছিলেন মুসলিম বিদ্বেষী। যে কারণে তারা ১৯৪০ সালে মুসলিমদেরকে উচ্ছেদ করার কাজে লিপ্ত হয় পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। 

পরে শ্যামপুরের চৌধুরী বাড়ির নেতৃত্বে বাজিতপুর গ্রামের ১২টি ইউনিয়নের মুসলমানরা একসঙ্গে হয়ে এর তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার ফল স্বরূপ কানসাটের জমিদার শীতাংশু বাবু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চান। 

এভাবেই এই জমিদারদের ইতিহাস মানুষের মনে গেঁথে আছে। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও পতন হয়।

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ বগঞ জ উপজ ল র ক র কর প তর র

এছাড়াও পড়ুন:

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে রাজপুর প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম

ঝালকাঠির রাজপুর উপজেলার প্রধান ডাকঘরের ভবনটি ১৯৯০ সালে নির্মিত হলেও এরপর আর কোনো সংস্কার হয়নি। ভবনের ছাদের অবস্থা এতটাই খারপা যে, প্লাস্টার খসে পড়ছে এবং বৃষ্টির পানি ভেতরে ঢুকছে। ছাদের বিমের রডও বেরিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে ডাকঘরটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। 

ডাকঘরের পোস্টমাস্টার গোলাম মোস্তফা বলেন, “ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ছাদ থেকে পানি পড়ছে, দ্বিতীয় তলার অবস্থা আরো ভয়াবহ। ভবনটিকে গণপূর্ত বিভাগ ‘ব্যবহারের অনুপোযোগী’ ঘোষণা করলেও এখনও ঝুঁকি নিয়েই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।” 

পোস্ট অফিস সূত্র জানায়, ভবনটির চারপাশে কোনো প্রাচীর না থাকায় এটি এখন মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। ভবনের ভেতরে ও বাইরে শেওলা পড়েছে। পুরো ভবনটি বর্ষাকালে ভুতুড়ে পরিবেশ ধারণ করে। কম্পিউটার, স্ক্যানার, ফ্র্যাঙ্কিং মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পানিতে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পোস্ট অফিসটিতে বর্তমানে মাত্র চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে একজন পোস্টম্যান প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত থাকায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত আসবাবপত্র না থাকায় এবং জনবল সংকটের কারণে সেবার মানে অবনতি ঘটেছে।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের শঙ্কা

বিপৎসীমার ওপরে পটুয়াখালীর নদ-নদীর পানি, ৬ গ্রাম প্লাবিত

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ডাকঘরের এমন জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে তারা অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করতে ভয় পান। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এটি ধ্বংসপ্রায় ভবনে পরিণত হয়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পোস্ট বক্সটিও। রাজাপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় প্রধান ডাকঘরটির এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না তারা। জরুরি ভিত্তিতে ভবনটির সংস্কার ও জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির পোস্ট অফিস পরিদর্শক আবুল ফয়েজ বলেন, “উপজেলার প্রধান ডাকঘরের দুরবস্থার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা আবেদন করেছি।” 

বরিশাল অঞ্চলের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) মন্জুরুল আলম বলেন, “শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া এ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ভবনের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শিগগিরি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/অলোক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
  • ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ
  • চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি
  • মাইলস্টোনে বিমানবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্প, সেবা নিতে আসছেন অনেকে
  • ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে রাজপুর প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম
  • ডেমরায় হেলে পড়েছে ৬ তলা ভবন
  • ডেমরায় ৬ তলা ভবন হেলে পড়েছে ৭ তলা ভবনে : আতঙ্ক