কুয়েটে প্রশাসনিক শূন্যতায় বেতন-ভাতা বন্ধ, তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন
Published: 1st, June 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান প্রশাসনিক অচলাবস্থা নিরসন ও বন্ধ থাকা বেতন-ভাতার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মকর্তা সমিতি ও কর্মচারী সমিতি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুয়েটের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ঈদের বোনাসও বন্ধ আছে। এটি কেবল আর্থিক সংকট নয়; বরং এটি মর্যাদা, সম্মান ও ন্যায্য অধিকার হরণের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার এ ব্যাপারে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মঈনুল হক বলেন, ‘আমরা গভীর সংকট ও হতাশার মধ্যে আছি। কুয়েটের ইতিহাসে এই প্রথম পবিত্র ঈদুল আজহার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন-বোনাস ছাড়াই দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় ১ হাজার ১৫০ পরিবার এই অবস্থায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে।’
মানববন্ধনে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো: অবিলম্বে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও কুয়েটবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ, বন্ধ থাকা বেতন ও ঈদের বোনাস দ্রুত প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। পরে ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো. হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে তিন সপ্তাহের মাথায় ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। উপাচার্য না থাকায় চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সেশনজট নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদুল আজহার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন ও বোনাস পাননি।
বিশ্ববিদালয় সূত্র জানায়, কুয়েটে সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে। তাঁর স্বাক্ষর ছাড়া এক টাকার বিলও পাস হয় না। কিন্তু অনুপস্থিত ও পদত্যাগ মিলিয়ে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে কুয়েটে উপাচার্য নেই। এতে ১ হাজার ১০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের বেতনভাতা ও ঈদের উৎসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সামনে ঈদের ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছে। উপাচার্য না থাকায় ক্লাস শুরুর বিষয়টিও সুরাহা হচ্ছে না। আর কুয়েটের আর্থিক সব বিষয় উপাচার্যের হাতে থাকে। উপাচার্য না থাকায় তাঁদের মে মাসের বেতন-ভাতা ও ঈদের বোনাস সব বন্ধ আছে।
আরও পড়ুনঅভিভাবকশূন্য কুয়েট, নতুন প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনায় শিক্ষার্থীরা২৬ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনকুয়েটে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ২২ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন কর মকর ত ও ঈদ র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে টানা কর্মসূচির ঘোষণা অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ (ক্যাডেট) উপপরিদর্শকেরা। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের সড়কের এক পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। অব্যাহতি পাওয়া ৪০তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ (ক্যাডেট) উপপরিদর্শকদের পক্ষ থেকে এসআই রকিবুল হাসান এই ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সেগুলোতে লেখা ছিল—‘এক বছরের পরিশ্রম, বৃথা কেন জানতে চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, চাকরি পুনর্বহাল চাই’, ‘রাষ্ট্রের বোঝা নয়, সেবক হতে চাই’, ‘বেতন ছাড়া ৩৬৫ দিন, আমার চাকরি ফিরিয়ে দিন’, ‘লাল সবুজের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
অব্যাহতি পাওয়া এসআই রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতির পর আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবার কাছে আমাদের দাবি জানিয়েছি। সর্বশেষ গত ১৯ মে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু উনি ব্যস্ততার কারণে ওই দিন দেখা করতে পারেননি।’
আরও পড়ুনপুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের মানববন্ধন১৯ মে ২০২৫রকিবুল আরও বলেন, ‘পুলিশের মহাপরিদর্শক এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সঙ্গে দেখা করার কথা বললেও দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তাই আমরা আবার এসেছি। এখন থেকে চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে আমাদের টানা কর্মসূচি চলবে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এসআইদের ভাষ্য, প্রশিক্ষণরত অবস্থায় অন্যায়ভাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে চার ধাপে ৩২১ জনকে চাকিরচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হয়নি। অব্যাহতির পর ছয় মাস ধরে সরকারের কাছে দাবি জানালেও কেউ তাঁদের কথা শুনছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা আইজিপির কাছে এসেছেন। কিন্তু তিনিও দেখা করছেন না। তাই এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানববন্ধন করবেন তাঁরা।
রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলাকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে চার ধাপে ৪০তম ব্যাচের ৩২১ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নাশতা না খেয়ে হট্টগোল, প্রশিক্ষকের আদেশ না শোনা, অমনোযোগিতার মতো কারণ দেখিয়ে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকে তাঁরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।