ট্রাম্পের ভুলে চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ কি লেগেই যাবে
Published: 4th, June 2025 GMT
বিশ্ব রাজনীতিতে একটি পুরোনো প্রবচন আছে—খারাপ জিনিস একসঙ্গে তিনটি আসে।
এই মুহূর্তে ইউরোপে (ইউক্রেনে) যুদ্ধ চলছে; মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। এখন অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হয়তো এশিয়াও শিগগিরই যুদ্ধের মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে।
এমন ধারণা অমূলক নয়। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হুমকি ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন যুদ্ধংদেহী বার্তা দিচ্ছে। উত্তর কোরিয়া নিয়মিত পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে হুমকি দিচ্ছে।
তবে সবচেয়ে স্পষ্ট ও তাৎক্ষণিক উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যকার উত্তেজনা। আর এর পেছনে কাজ করছে ট্রাম্পের ভুল কৌশলনীতি।
পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের সেনাবাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। সি চিন পিংয়ের ভাষায়, তাইওয়ান হলো চীনের চুরি হয়ে যাওয়া এলাকা এবং সেটি এখন ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই উদ্দেশ্য পূরণে চীন যুদ্ধজাহাজ, বিমানবাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, এমনকি প্যারাট্রুপার ও ভাসমান ডক—সবকিছু সক্রিয় করছে। তাইওয়ান ঘিরে চীনের মহড়াকে অনেকেই ‘যুদ্ধের মহড়া’ বলে মনে করছেন।
এখানেই শেষ নয়। চীন রাজনৈতিক ও প্রোপাগান্ডা যুদ্ধেও নেমেছে। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে তারা ‘স্বাধীনতাপন্থী দাঙ্গাবাজ’ বলে সরাসরি আক্রমণ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধঘেঁষা বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে।
লাই চিং-তেও পিছিয়ে নেই। তিনি চীনকে ‘বিদেশি শত্রু’ বলেছেন। তাঁর সরকার গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে নতুন আইন করেছে এবং সাইবার হামলা প্রতিরোধে নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে পর্যন্ত যুদ্ধের প্রস্তুতির ছাপ দেখা যাচ্ছে। সেখানকার একটি টেলিভিশনে ‘জিরো ডে’ নামের একটি নাটক সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেখানে দেখানো হচ্ছে, চীন আকস্মিক আক্রমণ করলে দেশ কীভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তার পর থেকে বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। কিন্তু এখন চীন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সামরিকভাবে শক্তিশালী। মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হংকং (১৯৯৭) ও ম্যাকাও (১৯৯৯)-এর মতো ‘তৃতীয় বিজয়’ হিসেবে তাইওয়ানকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্প কেন সি চিন পিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি ‘মাওবাদী’১৭ মে ২০২৫সি চিন পিংয়ের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন। ট্রাম্প এখন যেসব চীনবিরোধী নীতি গ্রহণ করছেন, তাকে ভুল ও বিপজ্জনক বলেই মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের চীন–নীতি মূলত বাণিজ্যনির্ভর শত্রুতা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি চীনের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়েছেন, প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করেছেন, এমনকি চীনা ছাত্রদের ভিসা দিতেও বাধা সৃষ্টি করেছেন।
চীনের দৃষ্টিতে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ সরাসরি যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি। তবে আসল বিপদ অন্য জায়গায়।
ট্রাম্প মনে করেন, কঠোর ভাষা আর চাপ সৃষ্টি করলেই সি চিন পিং পিছু হটবেন। কিন্তু চীন গণতন্ত্র নয়; তাদের সরকার টিকে থাকে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ওপর। ট্রাম্পের শুল্কনীতি সরাসরি সেই ভিত্তিকে আঘাত করছে। ফলে চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতেই পারে।
এ অবস্থায় সম্ভাব্য প্রশ্ন দাঁড়ায়: সি কি ট্রাম্পকে বলবেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিন, না হলে যুদ্ধ!’, নাকি তিনি নিজেই যুদ্ধ শুরু করে দেবেন?
চীনা সংস্কৃতিতে ‘তিন’ অঙ্কটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯৭ সালে হংকং এবং ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও—এই দুটি অঞ্চলই চীনের কাছে ফিরে এসেছে। এখন সি চিন পিং চাইছেন, তাঁর শাসনকালের তৃতীয় বিজয় হোক তাইওয়ান।চীন অবশ্য যুদ্ধ না করেও যুদ্ধের কৌশল নিতে পারে। তারা চাইলে সরাসরি আগ্রাসনের পথে না গিয়ে ‘নরম যুদ্ধের’ পথ নিতে পারে। যেমন তারা সমুদ্র ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করতে পারে; সাইবার হামলা ও জ্বালানিসংকট সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাইওয়ানকে একঘরে করার চেষ্টা করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প কী করবেন? কারণ, তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ এখন ‘কৌশলগত দুর্বলতা’য় রূপ নিয়েছে।
চীন জানে যে ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ চান না। তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান না, ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে ভয় পান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে অনীহা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প আত্মরক্ষা আর নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে তাইওয়ানের ওপর ট্রাম্পের বিশ্বাস নেই। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, তাইওয়ান আমেরিকার বন্ধু নয়; তারা শুধু চিপস রপ্তানি করে আর আমেরিকানদের চাকরি ‘খেয়ে’ ফেলে। তিনি তাইওয়ানের পণ্যের ওপরও শুল্ক বসিয়েছেন।
ট্রাম্পের এমন আচরণ দেখে কারও মনে হবে না যে তিনি যুদ্ধের সময় তাইওয়ানকে রক্ষা করতে আসবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নীতিনির্ধারকও মনে করেন, তাইওয়ানকে রক্ষা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। আর মার্কিন নীতিনির্ধারকদের একটা বিরাট অংশ চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর পক্ষে।
এই মুহূর্তে তাইওয়ান রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। তাদের সেনাবাহিনী পুরোনো ও দুর্বল; প্রতিরক্ষা বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় কম। চীনা যুদ্ধজাহাজ ও বিমান নিয়মিত তাইওয়ানের সীমান্ত লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত অস্ত্রও এখনো তাইওয়ানে এসে পৌঁছায়নি।
তাইওয়ানের এই দুর্বলতাকে সি চিন পিং ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
চীনা সংস্কৃতিতে ‘তিন’ অঙ্কটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯৭ সালে হংকং এবং ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও—এই দুটি অঞ্চলই চীনের কাছে ফিরে এসেছে। এখন সি চিন পিং চাইছেন, তাঁর শাসনকালের তৃতীয় বিজয় হোক তাইওয়ান।
এখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে যদি যুক্তরাষ্ট্র দুর্বলতা প্রকাশ করে, তাহলে চীন তাইওয়ানের দিকে হাত বাড়াতে দ্বিধা করবে না এবং সি চিন পিংকে দোষ দেওয়ারও উপায় থাকবে না; কারণ ট্রাম্প তো তাঁকে সে সুযোগই করে দিয়েছেন।
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
সাইমন টিসডাল দ্য গার্ডিয়ানের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ত ইওয় ন র দ র বল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের ভুলে চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ কি লেগেই যাবে
বিশ্ব রাজনীতিতে একটি পুরোনো প্রবচন আছে—খারাপ জিনিস একসঙ্গে তিনটি আসে।
এই মুহূর্তে ইউরোপে (ইউক্রেনে) যুদ্ধ চলছে; মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। এখন অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হয়তো এশিয়াও শিগগিরই যুদ্ধের মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে।
এমন ধারণা অমূলক নয়। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হুমকি ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন যুদ্ধংদেহী বার্তা দিচ্ছে। উত্তর কোরিয়া নিয়মিত পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে হুমকি দিচ্ছে।
তবে সবচেয়ে স্পষ্ট ও তাৎক্ষণিক উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যকার উত্তেজনা। আর এর পেছনে কাজ করছে ট্রাম্পের ভুল কৌশলনীতি।
পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের সেনাবাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। সি চিন পিংয়ের ভাষায়, তাইওয়ান হলো চীনের চুরি হয়ে যাওয়া এলাকা এবং সেটি এখন ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই উদ্দেশ্য পূরণে চীন যুদ্ধজাহাজ, বিমানবাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, এমনকি প্যারাট্রুপার ও ভাসমান ডক—সবকিছু সক্রিয় করছে। তাইওয়ান ঘিরে চীনের মহড়াকে অনেকেই ‘যুদ্ধের মহড়া’ বলে মনে করছেন।
এখানেই শেষ নয়। চীন রাজনৈতিক ও প্রোপাগান্ডা যুদ্ধেও নেমেছে। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে তারা ‘স্বাধীনতাপন্থী দাঙ্গাবাজ’ বলে সরাসরি আক্রমণ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধঘেঁষা বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে।
লাই চিং-তেও পিছিয়ে নেই। তিনি চীনকে ‘বিদেশি শত্রু’ বলেছেন। তাঁর সরকার গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে নতুন আইন করেছে এবং সাইবার হামলা প্রতিরোধে নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে পর্যন্ত যুদ্ধের প্রস্তুতির ছাপ দেখা যাচ্ছে। সেখানকার একটি টেলিভিশনে ‘জিরো ডে’ নামের একটি নাটক সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেখানে দেখানো হচ্ছে, চীন আকস্মিক আক্রমণ করলে দেশ কীভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তার পর থেকে বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। কিন্তু এখন চীন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সামরিকভাবে শক্তিশালী। মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হংকং (১৯৯৭) ও ম্যাকাও (১৯৯৯)-এর মতো ‘তৃতীয় বিজয়’ হিসেবে তাইওয়ানকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্প কেন সি চিন পিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি ‘মাওবাদী’১৭ মে ২০২৫সি চিন পিংয়ের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন। ট্রাম্প এখন যেসব চীনবিরোধী নীতি গ্রহণ করছেন, তাকে ভুল ও বিপজ্জনক বলেই মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের চীন–নীতি মূলত বাণিজ্যনির্ভর শত্রুতা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি চীনের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়েছেন, প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করেছেন, এমনকি চীনা ছাত্রদের ভিসা দিতেও বাধা সৃষ্টি করেছেন।
চীনের দৃষ্টিতে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ সরাসরি যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি। তবে আসল বিপদ অন্য জায়গায়।
ট্রাম্প মনে করেন, কঠোর ভাষা আর চাপ সৃষ্টি করলেই সি চিন পিং পিছু হটবেন। কিন্তু চীন গণতন্ত্র নয়; তাদের সরকার টিকে থাকে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ওপর। ট্রাম্পের শুল্কনীতি সরাসরি সেই ভিত্তিকে আঘাত করছে। ফলে চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতেই পারে।
এ অবস্থায় সম্ভাব্য প্রশ্ন দাঁড়ায়: সি কি ট্রাম্পকে বলবেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিন, না হলে যুদ্ধ!’, নাকি তিনি নিজেই যুদ্ধ শুরু করে দেবেন?
চীনা সংস্কৃতিতে ‘তিন’ অঙ্কটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯৭ সালে হংকং এবং ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও—এই দুটি অঞ্চলই চীনের কাছে ফিরে এসেছে। এখন সি চিন পিং চাইছেন, তাঁর শাসনকালের তৃতীয় বিজয় হোক তাইওয়ান।চীন অবশ্য যুদ্ধ না করেও যুদ্ধের কৌশল নিতে পারে। তারা চাইলে সরাসরি আগ্রাসনের পথে না গিয়ে ‘নরম যুদ্ধের’ পথ নিতে পারে। যেমন তারা সমুদ্র ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করতে পারে; সাইবার হামলা ও জ্বালানিসংকট সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাইওয়ানকে একঘরে করার চেষ্টা করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প কী করবেন? কারণ, তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ এখন ‘কৌশলগত দুর্বলতা’য় রূপ নিয়েছে।
চীন জানে যে ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ চান না। তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান না, ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে ভয় পান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে অনীহা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প আত্মরক্ষা আর নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে তাইওয়ানের ওপর ট্রাম্পের বিশ্বাস নেই। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, তাইওয়ান আমেরিকার বন্ধু নয়; তারা শুধু চিপস রপ্তানি করে আর আমেরিকানদের চাকরি ‘খেয়ে’ ফেলে। তিনি তাইওয়ানের পণ্যের ওপরও শুল্ক বসিয়েছেন।
ট্রাম্পের এমন আচরণ দেখে কারও মনে হবে না যে তিনি যুদ্ধের সময় তাইওয়ানকে রক্ষা করতে আসবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নীতিনির্ধারকও মনে করেন, তাইওয়ানকে রক্ষা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। আর মার্কিন নীতিনির্ধারকদের একটা বিরাট অংশ চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর পক্ষে।
এই মুহূর্তে তাইওয়ান রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। তাদের সেনাবাহিনী পুরোনো ও দুর্বল; প্রতিরক্ষা বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় কম। চীনা যুদ্ধজাহাজ ও বিমান নিয়মিত তাইওয়ানের সীমান্ত লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত অস্ত্রও এখনো তাইওয়ানে এসে পৌঁছায়নি।
তাইওয়ানের এই দুর্বলতাকে সি চিন পিং ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
চীনা সংস্কৃতিতে ‘তিন’ অঙ্কটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯৭ সালে হংকং এবং ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও—এই দুটি অঞ্চলই চীনের কাছে ফিরে এসেছে। এখন সি চিন পিং চাইছেন, তাঁর শাসনকালের তৃতীয় বিজয় হোক তাইওয়ান।
এখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে যদি যুক্তরাষ্ট্র দুর্বলতা প্রকাশ করে, তাহলে চীন তাইওয়ানের দিকে হাত বাড়াতে দ্বিধা করবে না এবং সি চিন পিংকে দোষ দেওয়ারও উপায় থাকবে না; কারণ ট্রাম্প তো তাঁকে সে সুযোগই করে দিয়েছেন।
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
সাইমন টিসডাল দ্য গার্ডিয়ানের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক