Prothomalo:
2025-11-03@06:38:28 GMT

মহানবী (সা.)-এর প্রথম ক্রন্দন

Published: 11th, June 2025 GMT

ছয় বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মা আমিনার মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হন। তাঁর জীবনে এটিই ছিল মৃত্যুর প্রথম অভিজ্ঞতা। তিনি দেখলেন, তাঁর মা অশ্রুসিক্ত চোখে বারাকাহর দিকে তাকিয়ে বলছেন, ‘তুমি এখন তার মা।’ নবীজি বারাকাহর কান্না দেখলেন, তাঁর মায়ের কষ্ট দেখলেন।

তিনি বুঝতে পারছিলেন না কী ঘটছে। তাঁর মা শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে। নবীজি ডাকলেন, মা, মা। কিন্তু তিনি আর সাড়া দিলেন না। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৫৮-১৫৯, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৮)

আমরা জানি না, দৃশ্যটা আসলে কতটা হৃদয়বিদারক ছিল। নিশ্চয় ছয় বছরের শিশু মুহাম্মদ এ অসহায় অবস্থায় তাঁর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছিলেন। তিনি মাকে ছাড়তে চাননি। বারাকাহ তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন আর তিনি বললেন, ‘তুমি এখন আমার মা।’ তিনি বারাকাহর কাছে আশ্রয় খুঁজলেন, যিনি তাঁর একমাত্র অভিভাবক হয়ে উঠলেন।

আমিনার মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান সান্ত্বনাদাতা ছিলেন। নবীজি তাঁকে ‘আমার মায়ের পর আমার মা’ বলে সম্বোধন করতেন।ইবনে হাজার আল-আসকালানি (রহ.

), আল-ইসাবাহ ফি তাময়িয আস-সাহাবা

ছয় বছর বয়সে তাঁর মা আমিনার সঙ্গে ইয়াসরিব (মদিনা) সফরে যান। তিনি নানাবাড়ি বনু নাজ্জারের তাঁর মামাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আল-আবওয়া নামক স্থানে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে মারা যান।

বারাকাহ, যিনি উম্মু আয়মান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি আমিনার দাসি ছিলেন। তিনি নবীজিকে মক্কায় ফিরিয়ে আনেন। (ইবনে সা’দ, কিতাব আত-তাবাকাত আল-কুবরা, ১/১১৬-১১৭, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯০)

উম্মু আয়মানের (বারাকাহ) জীবনীতে উল্লেখ আছে, তিনি নবীজির শৈশবে তাঁর যত্ন নিয়েছেন এবং আমিনার মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান সান্ত্বনাদাতা ছিলেন। নবীজি তাঁকে ‘আমার মায়ের পর আমার মা’ বলে সম্বোধন করতেন। (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, আল-ইসাবাহ ফি তাময়িয আস-সাহাবা, ৮/২২০, দারুল জিল, বৈরুত, ১৯৯৫)

একটি হাদিসে আছে, নবীজি পরবর্তী জীবনে তাঁর মায়ের কবরে গিয়ে কেঁদেছিলেন, সাহাবিরাও কেঁদেছিলেন, যা তাঁর মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শৈশবের কষ্টের প্রতিফলন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭৪)

আজকের দিনে ছয় বছরের শিশুরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, নিশ্চিন্ত জীবন কাটায়। কিন্তু নবীজি এই বয়সে এতিম হয়ে গেলেন, তাঁর একমাত্র আশ্রয় মাকে হারালেন।আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৯ এপ্রিল ২০২৫

এই বেদনার তাৎপর্য

আমরা অনেক সময় নিজেদের দুঃখ-কষ্টকে সবচেয়ে বড় মনে করি। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.), যিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, ছয় বছর বয়সেই এমন বেদনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজকের দিনে ছয় বছরের শিশুরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, নিশ্চিন্ত জীবন কাটায়। কিন্তু নবীজি এই বয়সে এতিম হয়ে গেলেন, তাঁর একমাত্র আশ্রয় মাকে হারালেন।

আল্লাহ তাঁকে এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানবতার প্রতি গভীর করুণা ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়েছিলেন। শৈশবের বেদনা তাঁকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিল, যিনি দরিদ্র, এতিম ও ক্ষতিগ্রস্তদের বেদনা গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। তিনি তাদের কষ্ট নিজের কষ্টের চেয়েও বেশি অনুভব করতেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি এতিম ছিলে না? আমি তোমাকে আশ্রয় দিয়েছি।’ (সুরা আদ-দুহা: ৬)

আমাদের জন্য শিক্ষা

নবীজি এতিমদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি এতিমের প্রতি দয়া করে, সে ও আমি জান্নাতে এই দুই আঙুলের মতো কাছাকাছি থাকব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৯৮৩)।

তিনি দরিদ্র, অসহায় ও কষ্টগ্রস্ত সবার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। নবীজি তাঁর কষ্টকে হৃদয়ে ধারণ করে মানুষের জন্য আলো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর রহমত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা আশ-শারহ: ৬)।

আমরা যখন জীবনে কষ্টের মুখোমুখি হই, তখন মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রিয় নবীও এমন কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কষ্ট আমাদের ভেঙে দেওয়ার জন্য নয়; বরং আমাদের আরও শক্তিশালী ও মানবিক করে গড়ে তোলার জন্য।

আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ আম ন র র জন য আম র ম আম দ র করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘প্রিয়দর্শিনী’খ্যাত নায়িকা আরিফা পারভীন মৌসুমী। সোমবার (৩ নভেম্বর) ৫২ বছর বয়স পূর্ণ করলেন এই অভিনেত্রী। বিশেষ এই দিনে দেশে নেই, সন্তানদের সঙ্গে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মৌসুমী। 

মৌসুমী যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তার স্বামী ওমর সানী। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে চিত্রনায়ক ওমর সানী কয়েকটি ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করে স্ত্রীকে ভালোবাসার বার্তা দিয়েছেন।  

আরো পড়ুন:

মৌসুমীকে বিয়ে করা কি ভুল ছিল ওমর সানীর

তারকাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ

এসব ছবির ক্যাপশনে ওমর সানী লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। দূরে থেকেও আমরা কাছে এটাই বাস্তব, আর যারা আমাদেরকে নিয়ে উল্টাপাল্টা নিউজ করে ওরা হচ্ছে…। শুভ জন্মদিন।” 

জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা প্রিয় অভিনেত্রীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওমর সানীর এই পোস্টে নেটিজেনদের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মৌসুমীকে।  

চিত্রনায়িকা মুনমুন লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী, প্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী আপা।” শাহনূর লেখেন, “শুভ জন্মদিন আপু।” আইরিন সুলতানা লেখেন, “শুভ জন্মদিন।” এমন অসংখ্য মন্তব্য কমেন্ট বক্সে ভেসে বেড়াচ্ছে।  

১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন মৌসুমী। তার বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি ও মা শামীমা আখতার জামান। ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মৌসুমী। এরপর ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন, যার ওপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ধারার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। 

চিত্রনায়িকা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে মৌসুমীর অভিষেক ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এ সিনেমায় সালমান শাহর সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন এ অভিনেত্রী। প্রথম সিনেমাতে নিজেদের মেধার জানান দেন সালমান শাহ ও মৌসুমী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুজনই ঢালিউডে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নেন। তারপর তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন মৌসুমী। 

নারগিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’ ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এই অভিনেত্রী পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ