ছয় বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মা আমিনার মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হন। তাঁর জীবনে এটিই ছিল মৃত্যুর প্রথম অভিজ্ঞতা। তিনি দেখলেন, তাঁর মা অশ্রুসিক্ত চোখে বারাকাহর দিকে তাকিয়ে বলছেন, ‘তুমি এখন তার মা।’ নবীজি বারাকাহর কান্না দেখলেন, তাঁর মায়ের কষ্ট দেখলেন।
তিনি বুঝতে পারছিলেন না কী ঘটছে। তাঁর মা শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে। নবীজি ডাকলেন, মা, মা। কিন্তু তিনি আর সাড়া দিলেন না। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৫৮-১৫৯, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৮)
আমরা জানি না, দৃশ্যটা আসলে কতটা হৃদয়বিদারক ছিল। নিশ্চয় ছয় বছরের শিশু মুহাম্মদ এ অসহায় অবস্থায় তাঁর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছিলেন। তিনি মাকে ছাড়তে চাননি। বারাকাহ তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন আর তিনি বললেন, ‘তুমি এখন আমার মা।’ তিনি বারাকাহর কাছে আশ্রয় খুঁজলেন, যিনি তাঁর একমাত্র অভিভাবক হয়ে উঠলেন।
আমিনার মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান সান্ত্বনাদাতা ছিলেন। নবীজি তাঁকে ‘আমার মায়ের পর আমার মা’ বলে সম্বোধন করতেন।ইবনে হাজার আল-আসকালানি (রহ.), আল-ইসাবাহ ফি তাময়িয আস-সাহাবা
ছয় বছর বয়সে তাঁর মা আমিনার সঙ্গে ইয়াসরিব (মদিনা) সফরে যান। তিনি নানাবাড়ি বনু নাজ্জারের তাঁর মামাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আল-আবওয়া নামক স্থানে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে মারা যান।
বারাকাহ, যিনি উম্মু আয়মান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি আমিনার দাসি ছিলেন। তিনি নবীজিকে মক্কায় ফিরিয়ে আনেন। (ইবনে সা’দ, কিতাব আত-তাবাকাত আল-কুবরা, ১/১১৬-১১৭, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯০)
উম্মু আয়মানের (বারাকাহ) জীবনীতে উল্লেখ আছে, তিনি নবীজির শৈশবে তাঁর যত্ন নিয়েছেন এবং আমিনার মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান সান্ত্বনাদাতা ছিলেন। নবীজি তাঁকে ‘আমার মায়ের পর আমার মা’ বলে সম্বোধন করতেন। (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, আল-ইসাবাহ ফি তাময়িয আস-সাহাবা, ৮/২২০, দারুল জিল, বৈরুত, ১৯৯৫)
একটি হাদিসে আছে, নবীজি পরবর্তী জীবনে তাঁর মায়ের কবরে গিয়ে কেঁদেছিলেন, সাহাবিরাও কেঁদেছিলেন, যা তাঁর মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শৈশবের কষ্টের প্রতিফলন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭৪)
আজকের দিনে ছয় বছরের শিশুরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, নিশ্চিন্ত জীবন কাটায়। কিন্তু নবীজি এই বয়সে এতিম হয়ে গেলেন, তাঁর একমাত্র আশ্রয় মাকে হারালেন।আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৯ এপ্রিল ২০২৫এই বেদনার তাৎপর্য
আমরা অনেক সময় নিজেদের দুঃখ-কষ্টকে সবচেয়ে বড় মনে করি। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.), যিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, ছয় বছর বয়সেই এমন বেদনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজকের দিনে ছয় বছরের শিশুরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, নিশ্চিন্ত জীবন কাটায়। কিন্তু নবীজি এই বয়সে এতিম হয়ে গেলেন, তাঁর একমাত্র আশ্রয় মাকে হারালেন।
আল্লাহ তাঁকে এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানবতার প্রতি গভীর করুণা ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়েছিলেন। শৈশবের বেদনা তাঁকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিল, যিনি দরিদ্র, এতিম ও ক্ষতিগ্রস্তদের বেদনা গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। তিনি তাদের কষ্ট নিজের কষ্টের চেয়েও বেশি অনুভব করতেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি এতিম ছিলে না? আমি তোমাকে আশ্রয় দিয়েছি।’ (সুরা আদ-দুহা: ৬)
আমাদের জন্য শিক্ষা
নবীজি এতিমদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি এতিমের প্রতি দয়া করে, সে ও আমি জান্নাতে এই দুই আঙুলের মতো কাছাকাছি থাকব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৯৮৩)।
তিনি দরিদ্র, অসহায় ও কষ্টগ্রস্ত সবার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। নবীজি তাঁর কষ্টকে হৃদয়ে ধারণ করে মানুষের জন্য আলো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর রহমত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা আশ-শারহ: ৬)।
আমরা যখন জীবনে কষ্টের মুখোমুখি হই, তখন মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রিয় নবীও এমন কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কষ্ট আমাদের ভেঙে দেওয়ার জন্য নয়; বরং আমাদের আরও শক্তিশালী ও মানবিক করে গড়ে তোলার জন্য।
আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ আম ন র র জন য আম র ম আম দ র করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদার দাবিতে পিটিয়ে হত্যা, দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদার দাবিতে সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোমিনুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাপ্পু (৪০) ও তার ভাই শুক্কুর (৩৭)। তারা উভয় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে।
আরো পড়ুন:
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি, মামলার অনুমোদন
ফেনীতে ছাত্র হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, ‘‘সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের তদারকি করতেন সিরাজুল ইসলাম। সে সময় শুক্কুর ও তার ভাই পাপ্পুসহ কয়েকজন সিরাজুলের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।’’
ঢাকা/অনিক/রাজীব