রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াতের নেতারা দাবি করেছেন, মাদক ব্যবসার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকার লোকজন ওই ব্যক্তিকে মারধর করেছেন। তাঁদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার আচিনঘাট এলাকার একটি পুকুরপাড়ে সাহেব আলী (৫০) নামের বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাহেব আলী ওই গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে আচিনঘাট এলাকার একটি পুকুরপাড়ে বিএনপির কর্মী সাহেব আলী বসে ছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে ধরে এনে পাশের রাস্তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পরে লোকজন ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনার পর বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব শামসুজ্জোহা সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেন, জামায়াতের বাগমারার গণিপুর ইউনিয়ন শাখার আমির মাহবুব আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, জামায়াতের কর্মী আতাউর রহমান, মাসুদসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাহেব আলীর ওপর হামলা করেন। তাঁরা তাঁর পায়ের রগ কেটে ফেলেছেন। তখন সাহেব আলীর চিৎকারে বিএনপির কর্মীরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাহেব আলী ও জামায়াত নেতা মাহবুব আলমের পরিবারের মধ্যে বিরোধ আছে। জামায়াত নেতার আমবাগানের কিছু অংশ সাহেব আলীর পুকুরের ভেতরে ধসে যাওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। পুকুরপাড়ে কয়েকটি খুপরি ও বসার জায়গা দেখা যায়। ওই ঘরে মাদক কেনাবেচা করার অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে বিএনপির নেতা শামসুজ্জোহা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা (জামায়াত) ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। রগ হয়তো কাটেনি, তবে কাছাকাছি গেছে। সাহেব আলী দলের সক্রিয় কর্মী। গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল। ৫ আগস্টের পর মুক্তি পেয়েছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াত নেতা মাহবুব আলম বলেন, সাহেব আলী একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। আচিনঘাটের একটি পুকুরপাড়ে খুপরি করে সেখানে মাদক কেনাবেচা করেন। আজ স্থানীয় লোকজন ধরে তাঁকে মারধর করেছেন বলে শুনেছেন। জামায়াত-শিবিরের কেউ এতে জড়িত নন। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অহিদুল ইসলামও একই ধরনের মন্তব্য করে বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। সাহেব আলীর ওপর হামলাকারীরা জামায়াতের রাজনীতি করেন। এর আগে সাহেব আলী জামায়াতের এক কর্মীর ওপর হামলা করেছেন। ওই ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ ব আল র ব এনপ র কর ছ ন র কর ম ব গম র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।

এম ড্যাশ ব্যবহার

বিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়ন

এআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।

গভীরতার অভাব

এআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিত

খুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।

আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।

ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।

খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।

লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে  ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।

সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ