বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে দেড় মাস ধরে ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ
Published: 18th, June 2025 GMT
প্রায় দেড় মাস পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ আছে। মূলত দরদামে না মেলায় ও কাঙ্ক্ষিত মানের পাথর না পাওয়ায় আমদানি বন্ধ রেখেছেন পাথর আমদানিকারকেরা। বিকল্প হিসেবে ভুটান থেকে পাথর আমদানির পথ খোলা আছে। অভিযোগ আছে, ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করতে পাঁয়তারা করছেন ভারতীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
গত সোমবার সকাল থেকে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দর এলাকায় ‘লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের’ ব্যানারে বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন ভারতীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ফলে বাংলাদেশগামী ভুটানের পাথরবাহী বেশ কিছু ট্রাক দুপুর পর্যন্ত আটকে থাকে।
ভারতীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক–শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা সরাসরি ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে দেবেন না। ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে ভুটানের পণ্য নামিয়ে তা ভারতের ট্রাকে বাংলাদেশে আনতে হবে—এই হচ্ছে তাঁদের দাবি।
কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ভুটানের ট্রাক সরাসরি বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে। এ ছাড়া নেপাল-ভুটানগামী বাংলাদেশি পণ্যবাহী গাড়ি যাওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। মূলত দাম বেশি ও মান বিবেচনায় ভারতের পাথর আমদানিতে আমদানিকারকদের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ৪ মে ভারত থেকে ৪৬টি ট্রাকে ১ হাজার ৮৩৭ টন পাথর আমদানি হয়েছিল। এরপর দাম ও মান জটিলতায় ৫ মে থেকে ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ আছে। তবে ভুটান থেকে পাথর আমদানিসহ ভারত ও নেপালের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল। এরপর টানা ১০ দিন পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গত রোববার বন্দরে শুরু হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এরই মধ্যে গত সোমবার সকালে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে আন্দোলনে নামেন সেখানকার ব্যবসায়ী ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে ওই দিন দুপুর পর্যন্ত ভুটানের পাথর নিয়ে গাড়ি আসা বন্ধ থাকলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভুটানের পাথর আসেনি। তবে দুপুরের পর ভুটানের ১৯৬টি ট্রাকে মোট ৬ হাজার ৪৬০ টন পাথর আমদানি হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার ভুটান থেকে ১৫০টি ট্রাকে ৪ হাজার ৬১৩ টন ও বুধবার (আজ) বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৪১টি ট্রাকে ১ হাজার ২২০ টন পাথর এসেছে। এদিন একই সময়ে নেপাল থেকে দুটি ট্রাকে ফুলঝাড়ু এসেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় পাথর আমদানিকারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত ভারতের সঙ্গে দরদামে না মেলায় ভারত পাথর দিচ্ছে না। ভারতের পাথরের মান ভালো না হলেও দাম বেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশে পাথরের বাজারও ভালো নয়। এ জন্য ভারতের পাথর আমদানি করলে লোকসান গুনতে হয়।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভুটানের পণ্য বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না, এ জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে আন্দোলন করছেন। এ ছাড়া ভারতের পাথর আকারে ছোট হওয়ায় মান তেমন ভালো নয়। ভুটানের বোল্ডারের (বড় পাথর) চাহিদা অনেক বেশি, তাই ভুটানের পাথরে আগ্রহ বেশি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৫ মে থেকে এই বন্দর দিয়ে ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ আছে। এ ছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’