পরিবারে ১০ ভাই, ১ বোন। সবাই মোটামুটি সচ্ছল। কেউ ব্যবসা, কেউ অন্য কোনো কাজ করেন; কিন্তু এক ভাই ‘বিপথে’ যাওয়ায় এখন পুরো পরিবারের লজ্জায় মাথা ‘কাটা’ যাচ্ছে। পথেঘাটে কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। যাকে নিয়ে এই কাণ্ড, তাঁর নাম ইছা মিয়া (৩৫)। বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সাধেরখলা গ্রামে।

ইছা মিয়ার বাবার নাম সায়েদ মিয়া। এলাকায় তাঁর পরিচিতি এখন ‘চোর’, ‘নেশাখোর’। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা ও শাসনের পরও তাঁকে সুপথে ফেরানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে পুলিশে দিয়েছে পরিবার। বাবা বাদী হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ইছা মিয়ার বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য হযরত আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘নষ্ট একজনই যথেষ্ট। এক ভাইয়ের লাগি সমাজে মুখ দেখাইতাম পারি না। কত চেষ্টা করছি। আসলে সঙ্গদোষে ভাইটা আমার নষ্ট অইছে।’ তাঁর ভাষ্য, এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে ইছা নেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি শুরু করেন। মানুষের বসতঘর, দোকানপাট, মসজিদ—কোনো কিছুই বাদ যায়নি। ধরাও পড়েছে বহুবার।

হযরত আলী ও তাঁর বাবা সায়েদ আলী বিএনপির রাজনীতি করেন। ইছা মিয়া করেন যুবলীগ। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৩ জুন ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ইছা মিয়াকে নিয়ে। সেখানে দেখা যায়, তাঁকে একটি দোকানঘরের পাকা খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। নানাজন তাঁকে প্রশ্ন করছেন। তিনি হাঁপাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার ঘরও মালটি আছে। মালটি আইন্যা দেই। আমারে একটু পানি খাওয়াও। তোমরা যা কও, আমি তা–ই রাজি। আমারে তোমরা আর মাইরো না, অত্যাচারটা কইরো না.

..।’

এ ঘটনার পর ইছা মিয়ার পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়; কিন্তু কেউ আসেননি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কয়েকজন মুরব্বিকে আনা হয়। ইছার কাছ থেকে চুরি করা জিনিস উদ্ধার করা হয়। এরপর মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এক যুবককে চুরির অভিযোগে প্রকাশ্যে মারধর, খবর দেওয়ার পরও পরিবারের কেউ না আসা, পরে থানায় মামলা করা—এসব ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি পরিবারের কষ্টের কথা জানা গেল।

বড় ভাই হযরত আলী বলেন, তিনি এলাকায় কয়লার ব্যবসা করেন। এলাকার একতা বাজারে তাদের একটি কাপড়ের দোকান আছে। সেখানে তাদের বাবা বসেন। ইছা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। একসময় পরিবার থেকে তাঁকে একটি বেকারি করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ভাড়ায় চালানোর জন্য একটি মোটরসাইকেল চায় ইছা। সেটিও কিনে দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করতে গিয়ে কিছু খারাপ ছেলের সঙ্গে তাঁর মেলামেলা শুরু হয়। সেখান থেকে নেশায় জড়ান।

শুরুতে পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, ইছা মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁকে শাসন করা হয়; কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি। এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর নামে চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। বাবা ও অন্য ভাইয়েরা তাঁকে এসব ছেড়ে দিতে বলেন। বোঝানোর চেষ্টা করেন, মারধর করেন। পরিবারের কাছে আবার মোটরসাইকেল চান। সেটা কিনে দেওয়া হয়। আবার বিক্রি করে দেন, চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। বছর দুই আগে বাড়ি থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।

ইছা মিয়া বউ আর তিন সন্তানকে নিয়ে চলে যান শ্বশুরবাড়ি, এলাকার লাকমা গ্রামে। কিন্তু স্বভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি অব্যাহত রেখেছেন বলে পরিবারের লোকজনের ভাষ্য। বিভিন্ন সময় লোকজন চুরির অভিযোগে তাঁকে ধরলেও কখনো মারধর করা হয়নি। তবে ৩ জুন বেধড়ক মারধরের শিকার হন তিনি। ছাড়া পাওয়ার পর পরিবারের লোকজন তাঁকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান। এরপর পরিবারের অন্যরা খোঁজ করে তাঁকে ধরে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে পুলিশে দেওয়ার পর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। এখন তিনি জেলা কারাগারে আছেন।

হযরত আলী বলেন, ভাইকে নানাভাবে শোধরানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তাঁকে নিয়ে পরিবারের লোকজন কতটা কষ্টে আছে, অন্যরা তা বুঝতে পারবেন না। মানুষ ভাইয়ের কাছ থেকে চুরির জিনিস কম দামে কিনে নেন, কেউ কেউ অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখেন; আবার সমালোচনাও করেন। কতটা অসহায় হলে একজন বাবা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন, ছেলেকে নিয়ে পুলিশে দেন—এটা যিনি এ পরিস্থিতিতে পড়েননি, তিনি বুঝতে পারবেন না, আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন ইছার বড় ভাই!

আরও পড়ুনতাহিরপুরের সেই যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিল পরিবার১৫ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র ল কজন র পর ব য় র পর ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা

রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।

আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।

লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২
  • যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা