বৈরী আবহাওয়া: এলএনজি সরবরাহ কমেছে ৮০ কোটি ঘনফুট
Published: 18th, June 2025 GMT
এমনিতেই দেশে চলছে গ্যাসের তীব্র সংকট। এর মধ্যেই আরও কমে গেছে সরবরাহ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমে গেছে গ্যাসের চাপ।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। গড়ে ৮০-৯০ ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। গত সোমবার দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে টার্মিনালগুলোতে এলএনজি আমদানি করা কার্গো যুক্ত হতে পারছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালে মজুত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ কমে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে।
দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় বুধবার মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে গ্যাস সংকট বিরাট আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অনকূলে থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। তখন টার্মিনালে জাহাজ যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। এমনটি হলে সংকট কেটে যাবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালে এলএনজি কার্গো নোঙর করতে পারছে না। এ কারণে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ও তিতাস গ্যাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের কম চাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ যুক্ত করে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪